Breaking News
Home / TRENDING / গোয়া : পরিণত অভিষেকের ছায়ায় কি ঢাকা পড়ল কল্যাণের কাল্পনিক মেরুদণ্ড?

গোয়া : পরিণত অভিষেকের ছায়ায় কি ঢাকা পড়ল কল্যাণের কাল্পনিক মেরুদণ্ড?

দেবক বন্দ্যোপাধ্যায়।

গল্প টা সবাই জানে। ছোটবেলা থেকেই জানে। একটা লম্বা টানা লাইন কে কী করে না ছুঁয়ে ছোট করে দেওয়া যায়, সেই গল্প সকলে জানে।
লম্বা টানা লাইনের পাশে তুলনায় আর একটি বড় লাইন টেনে দিলেই কেল্লাফতে। আগের লাইনটি হয়ে গেল খর্ব!

গল্পে বলা এই কৌশল গল্পে সহজ হলেও, জীবনে অতটাও সহজ নয়। আর রাজনৈতিক জীবনে তো বেশ কঠিন।
গোয়ার সাংবাদিক সন্মেলনে এই কঠিন কাজটাই অবলীলায় করে দেখালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভিনরাজ্যে, নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে সাংবাদিক সন্মেলন করতে গিয়ে কল্যাণ প্রসঙ্গ যে কোনও রাজনীতিকের পক্ষেই অস্বস্তিকর হবার কথা।

সম্প্রতি শ্রীরামপুরের সাংসদ যেভাবে অভিষেক কে তাঁর আক্রমণের লক্ষ্য করেছেন তা তৃণমূলে নজিরবিহীন। তিনি শুধু অভিষেকের ‘ব্যক্তিগত মত’ কে সরকার তথা মমতা বিরোধী বলে থেমে থাকেন নি। তিনি মমতা ছাড়া দলের আর কাউকে নেতা বলে মানেন না বলেও ঘোষণা করেছেন। তাঁর এই ঘোষণা আদতে মমতারই তৈরি দলের গঠনতন্ত্র কে চ্যালেঞ্জ করছে কি না, সে প্রশ্ন ওঠা সম্ভবত অস্বাভাবিক নয়। তিনি দলে একটি নতুন ধারনা আমদানি করার চেষ্টা করেছেন। সেটি হল দলের একজনই নেতা, বাকিরা পদাধিকারী। এই ধরনের বক্তব্য দলের ঘোষিত গণতান্ত্রিক চরিত্রের বিপক্ষে যায় না কি? পার্থ চট্টোপাধ্যায়রা দলীয়স্তরে বিষয়টির গভীরে গেছেন কিনা জানা নেই। তবে প্রকাশ্যে এই ব্যাপারে যতি চিহ্ন টানার পরামর্শ দিয়েছেন বলে খবরে প্রকাশ পেয়েছে। রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষও বিতর্কে ‘ক্লোজড চ্যাপটার’ ঘোষণা করে ইতি টানার চেষ্টা করেছিলেন। তবু থেমে থাকেন নি কল্যাণ। তিনি কবি শ্রীজাতর কবিতার পংক্তি উদ্ধৃত করে (তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়) বোঝাতে চেয়েছেন, দলে তিনিই মেরুদণ্ডী। তাঁর এই পংক্তি নির্বাচন দলের মধ্যে তাঁর বিদ্রোহ বার্তা প্রকাশ করে কিনা, যদি কোনো বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী থেকে থাকে, সেই গোষ্ঠীর নেতা হয়ে ওঠার অভিলাষ প্রমাণ করে কিনা, তা অবশ্য দলের শৃঙ্খলা কমিটির বিচার্য বিষয়।

উল্টোদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবার থেকে তাঁর আর এক ভাইপো, আকাশ, অভিষেকের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কল্যাণের লোকসভা কেন্দ্র শ্রীরামপুরে আওয়াজ উঠেছে, শ্রীরামপুর নতুন সাংসদ চায়। এমনকি কল্যাণের কর্মক্ষেত্র, কলকাতা হাইকোর্টৈও তৃণমূল সমর্থক আইনজীবীরা কল্যাণের বিরুদ্ধে গুরুতর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

কল্যাণ কে ঘিরে এ হেন আবহের মধ্যে, গোয়ার সাংবাদিক সন্মেলনে অভিষেক বলেন, তিনিও মমতাকেই নেতা মানেন। কল্যাণ ও তো একই কথা বলেছেন, এখানে বিরোধ কোথায়?
দলের অনেকে মনে করছেন, কল্যাণ যে ‘নেগেটিভ’ পরিস্থিতি দলের মধ্যে তৈরি করেছেন, যার ছায়া সুদুর গোয়াতেও পড়েছ। সেই নেগেটিভ পরিস্থিতি কে, অভিষেক অত্যন্ত সুচারু ভাবে ‘পজিটিভ’ করে নিয়েছেন বলেও অনেকের অভিমত।
প্রকাশ্যে দলের সাধারণ সম্পাদকের সমালোচনা, দলের গণতন্ত্রের লক্ষণ বলেই ব্যখ্যা করেছেন অভিষেক। এমনকি এই প্রসঙ্গে কংগ্রেস কে খোঁচা দিতেও ভোলেননি। বলেছেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সমালোচনা তৃণমূলে করা যায়, যা কংগ্রেসে ভাবাও যায় না।

কার্যতঃ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে একটিও অসন্মানজনক কথা না বলে, কোনওরকম বিরুপ মনোভাবের প্রদর্শন না করে, রাজনীতিতে তাঁর পরিপক্কতাই কি প্রমাণ করলেন না অভিষেক? ‘নেতা বলে মানি না’ বলে, যে খুল্লামখুল্লা অপমান দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কে কল্যাণ করেছেন, গোয়ার সাংবাদিক বৈঠকে বুদ্ধিদীপ্ত ও সংযমী প্রতিক্রিয়া দিয়ে অভিষেক কি বুঝিয়ে দিলেন না যে প্রকৃতপক্ষেই তিনি নেতা উঠেছেন?
একটি মেরুদণ্ডের কাল্পনিক ছবির পাশে, অভিষেক কি তাঁর পরিণত, পরিশীলিত, মার্জিত, অভিজ্ঞতা-অর্জিত ব্যক্তিত্বের ছায়াটি বসিয়ে দিলেন না?
ছায়াটি বসিয়ে দেবার পর কাল্পনিক মেরুদণ্ডটিকে তুলনামূলক ছোট লাগছে কি না, তা অবশ্য রাজনৈতিক খবরের সিরিয়াস পাঠকরাই ভালো বলতে পারবেন।

Spread the love

Check Also

চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক

ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *