চ্যানেল হিন্দুস্তান ব্যুরো:
গ্রামীণ ভারতে তিনজন ডাক্তারের মধ্যে দু’জন ডাক্তার ঘরোয়া স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করেন। যাঁদের মধ্যে আধুনিক ওষুধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই। অথচ অনেক সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যপরিষেবা কেন্দ্রে তাঁরাই চিকিৎসা করছেন।
রিপোর্ট অনুসারে, ৭৫ শতাংশ গ্রামে কমপক্ষে একজন স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী রয়েছেন। এবং একটি গ্রামে গড়ে তিনজন প্রাথমিক স্বাস্থ্য প্রদানকারী রয়েছেন। যাঁদের মধ্যে ৮৬ শতাংশ ডাক্তার বেসরকারি এবং ৬৮ শতাংশ চিকিৎসা প্রদানকারীর কোনও ডাক্তারি প্রশিক্ষণ নেওয়া নেই। ২০০৯ সালে ১৯টি রাজ্যের ১৫৯৯টি গ্রামে গবেষণা চালিয়ে এমনই তথ্য তুলে আনেন নয়াদিল্লির সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ (CPR)। সিপিআর-এর এই তথ্যটি সামাজিক বিজ্ঞান ও মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
এ ছাড়া ২০১৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘ভারতে স্বাস্থ্য কর্মী বাহিনী’ নামক অন্য এক রিপোর্টে বলেছে, ভারতে ৫৭.৩ শতাংশ ডাক্তার এলোপ্যাথিক ওষুধের প্রশিক্ষণ নেয়, কিন্তু তাঁদের মধ্যে কেউই ডাক্তারি পড়াশুনা করেননি। আশ্চর্যের কথা হল, প্রায় ৩১.৪ শতাংশ ডাক্তার মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। আবার সিপিআর-এর সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, তামিলনাড়ু ও কর্ণাটকের হাতুড়ে ডাক্তারদের যোগ্যতা বিহার ও উত্তরপ্রদেশের প্রশিক্ষিত ডাক্তারদের থেকে অনেক বেশি।
বেশিরভাগ গ্রামীণ এলাকায় এই হাতুড়ে বা কোয়াকস ডাক্তারাই একমাত্র ভরসা। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এমবিবিএস ডাক্তার সংখ্যায় এত কম এবং অল্প দূরত্বে সহজে না পাওয়ার জন্য বিকল্প হিসেবে এই হাতুড়ে ডাক্তারদের ওপরই নির্ভর করেন গ্রামবাসীরা। এ প্রসঙ্গে ম্যাককোর্ট স্কুল অফ পাবলিক পলিসি ও ওয়াশিংটনের জর্জিটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিষ্ণু দাস বলেন, আমি এ বিষয়ে মধ্যপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে কাজ করে একই উপলব্দি করেছি। আমি ভেবেছিলাম রাজ্যগুলি ধনী হলে গ্রামীণ ডাক্তারের সংখ্যা কমবে, কিন্তু ভুল। একমাত্র কেরল ছাড়া প্রায় প্রতিটি রাজ্যে একই ছবি দেখা গিয়েছে। চিকিৎসা মান উন্নত হওয়া স্বত্ত্বেও গ্রামীণ ডাক্তারদের সংখ্যা হ্রাস পায়নি।
অধ্যাপক দাসের মতে, উত্তর ভারতের থেকে দক্ষিণ ভারতে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো অনেক ভালো। কারণ এখানে এমবিবিএস ডাক্তারের সংখ্যা অনেক বেশি। আর উত্তরের রাজ্যগুলিতে এর সংখ্যা খুব কম। এখানে হাতুড়ে ডাক্তাররাই এমবিবিএস ডাক্তারদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেন। তাই গ্রামীণ চিকিৎসা ব্যবস্থায় দুটিই সমান্তরালে চলছে। তথ্য অনুসারে, ভারতে মোট ৬৮ শতাংশ গ্রামীণ ডাক্তার রয়েছে। তার মধ্যে ২৪ শতাংশ আয়ুশ ডাক্তার এবং মাত্র ৮ শতাংশের রয়েছে এমবিবিএস ডিগ্রি।
সিপিআর-এর সভাপতি ইয়ামিনী আইয়ার বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবায় আরও উন্নতি দরকার। তার জন্য প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এমবিবিএস ডাক্তারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় ভারত দু’ভাগে বিভক্ত। দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে ব্যয় সাপেক্ষ উন্নত চিকিৎসা হয়। কিন্তু উত্তরের তথা পূর্বের রাজ্যগুলিতে স্বল্প ব্যয়ে উন্নত চিকিৎসা হয় না।