সুমন সেনগুপ্ত
ময়ূরাক্ষীর নায়ক একজন বৃদ্ধ। একজন পিতা। তিনি সচরাচর কোন প্রশ্ন করেন না। কদাচিৎ সূক্ষ্ম প্রশ্ন করেন। তবে রাজনীতি নিয়ে কথা বলেন না,তাতে পারস্পরিক সম্পর্ক তিক্ত হতে পারে। এক কথায় তিনি বুদ্ধিজীবী। কেননা তিনি অধ্যাপক। তার একমাত্র ছেলে বিদেশে বড় চাকরি করে। তার স্ত্রী গত হয়েছেন। নিজ বাড়িতে তিনি বিচ্ছিন্ন। বড় একা। তার দেখভাল করে ট্রেনিংপ্রাপ্ত এক পরিচারিকা। তিনি অসুস্থ। সত্যি বলতে কী,তার রোগের লক্ষণ , তিনি বর্তমানকে ইরেজ করে অতীতকে সামনে নিয়ে আসেন। এ রকম এক চরিত্র সত্যজিৎ রায়ও তৈরি করেছিলেন। সোজা কথায় ছেলে ছাড়া অন্য কেউ তার সঙ্গে মানসিক সম্পর্ক তৈরি করতে পারে না। একমাত্র ছেলে বিদেশ থেকে এসেছে বাবাকে দেখতে। বাবাকে মনরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছে নিয়ে যায়। বাবা বিস্ময়বোধ করে। অতীত বারবার ঝাকুনি দিয়ে যায়। অতীতের ধুলোপড়া পাতাগুলো খুলতে থাকে। ছেলের উপস্হিতি বাবাকে তৃপ্তি দেয়। প্রবল শুন্যতার মধ্যে বাবা ময়ূরাক্ষীকে আঁকড়ে ধরতে চায়। ময়ূরাক্ষীর খোঁজ করতে গিয়ে ছেলেও আক্রান্ত হয় অতীতে। শেষ পর্যন্ত ময়ূরাক্ষী হারিয়ে যায়। ছেলে তার কর্মজীবনে ফিরে যায়। এই হল অতনু ঘোষের ময়ূরাক্ষী সিনেমার নির্যাস।
বাবা ও ছেলের মননকর্মের যে বিবরণ সিনেমায় তুলে ধরা হয়েছে – তা মনের গভীরে দাগ ফেলতে পারিনি। এই প্রসঙ্গে তুর্গেনেভের ফাদারস অ্যান্ড সনস লেখাটি মনে পড়ে গেল। এই উপন্যাসটি লিখে তুর্গেনেভের যেমন বিরূপ সমালোচনা হয়েছিল তেমনি প্রবল প্রশংসা পেয়েছিলেন। ময়ূরাক্ষী সিনেমাটি বাবা ও ছেলের মানবিক দৃষ্টিকোণকে সপাটে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। গল্পের ভেতরে গল্প বুনেছেন পরিচালক কিন্তু সিনেমাপ্রতিমা বানাতে পারেন নি। বাবার চরিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনয় গ্রাফে নতুন কোন শিখর ছুঁলেন কিনা সে প্রশ্ন অবান্তর। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিদ্বন্দ্বী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ছেলের চরিত্রে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় যথাযথ।
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
https://www.youtube.com/channelhindustan
https://www.facebook.com/channelhindustan