চ্যানেল হিন্দুস্তান ব্যুরো
নির্বাচনে পরাজয়ও একজন রাজনীতিক কে নেতা হিসেবে তুলে ধরতে পারে। তাঁর নেতৃত্ব গুণ প্রমাণ করতে পারে। ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটাতে পারে। রাজনীতির বৃহত্তর পরিসরে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
গোয়ায় হেরে গিয়ে রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চের এই দিকগুলোই আলোকিত করলেন অভিষেক। সংবাদ মাধ্যমের সামনে দাঁড়িয়ে পরাজয় স্বীকার করেও যা বললেন, তার মধ্যে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিহিত রইল।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গোয়া থেকে ফিরে দমদম বিমানবন্দরে অভিষেক সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে অভিষেক বুঝিয়ে দিলেন, ১০০ মিটারের দৌড় নয়, সর্বভারতীয় রাজনীতির ময়দানে তিনি ম্যারাথন শুরু করেছেন।
বৃহস্পতিবার পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হয়। এই নির্বাচনে কেবলমাত্র গোয়ার ভোটে অংশ নিয়েছিল বাংলার শাসকদল। বিধানসভা নির্বাচনে গোমন্তক পার্টির সঙ্গে জোট গড়েও খাতা খুলতে পারেনি জোড়াফুল শিবির। তবে তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হতে নারাজ অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘মাত্র কিছু দিনের মধ্যেই আমরা গোয়ার মানুষের কাছে পৌঁছতে পেরেছি। সকলের কাছে হয়তো পৌঁছতে পারিনি। তবে ছয় শতাংশ ভোট পেয়েছি। আমাদের প্রতিনিধিরা মানুষের জন্য কাজ করবেন। চারটি আসনে অত্যন্ত কম ব্যবধানে হেরেছি। এমন কয়েকটি বিধানসভা রয়েছে যেখানে তৃণমূল তিন মাসের মধ্যে ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘গোয়ার মানুষের কাছে আমরা বদ্ধপরিকর। যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তা করে দেখাব। আমরা গোয়ায় থাকব এবং ময়দানে লড়াই করব মানুষের স্বার্থে। ফলাফল পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘এই অল্প সময়ের মধ্যে গোয়ার মানুষ আমাদের গ্রহণ করেছেন। এর জন্য তাঁদের আমরা ধন্যবাদ জানাই। যে আশা নিয়ে আমরা লড়াই করেছিলাম সে আশা হয়তো পূরণ হয়নি। কিন্তু চারটি আসনে আমরা খুব কম ব্যবধানে হেরেছি। ১০০০-১২০০ ভোটের ব্যবধানে। নাভেলিম আসনে আমরা মাত্র ২৫০ ভোটে হেরেছি। বেলিম আসনেও আমরা কম ব্যবধানে হেরেছি। তবে এমন কিছু আসন রয়েছে যেখানে আমরা ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বিজেপি কিন্তু তিন-চার মাসের মধ্যে কোনও রাজ্যে গিয়ে পাঁচ-ছয় শতাংশ ভোট পায়নি। এমনকি একটি বিধানসভা থেকে ৩০ শতাংশ ভোটও পায়নি। তাই আমাদের কাছে একটা বড় বিষয়। দলের যে স্তরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা দরকার সেই বিষয়ে আলোচনা হবে।’’
জয়ের গর্বে ভিকট্রি সাইন দেখানোই যে কোনো নেতার একমাত্র কাজ নয়, হেরে গিয়ে উঠে দাঁড়ানো এবং দলকে উদ্দীপ্ত করাও যে নেতার কাজ, সেটি এদিন করে দেখালেন অভিষেক।
যাঁরা মনে করেন, জয়ই একমাত্র নেতা হবার মাপকাঠি। যাঁরা প্রকাশ্যে বলেও ফেলেন, ‘জিতে এলে নেতা বলে মানব।’ তাঁরা রাজনীতির এই সম্ভাবনার সংকেতটি অনুধাবন করতে পারছেন কি না জানা নেই, তবে তৃণমূল কে রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে ভিনরাজ্যে প্রতিষ্ঠা করার কাজটি যে একদিনের নয়, তা বুঝতে নিশ্চয়ই রাষ্ট্র বিজ্ঞানের স্কলার হতে হয় না!
রাজ্যের বিরোধী শিবিরের ফেসবুক প্লেয়াররা, অভিষেকের যে ভাষনের ভিডিও বাজিয়ে উল্লাস করছেন, তাঁদের নেতারাও জানেন, নির্বাচনের সময়, মাঠের রাজনীতিতে, কর্মী সমর্থকদের আত্মপ্রত্যয় যোগানো, একজন নেতারই কাজ। তাই সেদিনের বক্তৃতায়, ‘গোয়ায় আমরা সরকার করব’ বলে, টেকনিকালি কোনও ভূল করেন নি অভিষেক।
তিন মাসে বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় রাজ্য থেকে আরব সাগরের উপকূলে গিয়ে অভিষেক যা করে দেখিয়েছেন, নিরপেক্ষ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বিচারে তা খারাপ হবার কথা নয়। সঙ্গে আরো যেটা করেছেন, সেটা বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য। তিনি পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন। আর এটাই তাঁকে আরো নম্বর দিয়েছে।