সুমন ভট্টাচার্য :
অমর্ত্য সেন আমেরিকায় করোনা নিয়ে লেখার সময় পরিষ্কার উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন করোনায় মার্কিন মুলুকে বেশি মারা যাচ্ছেন কৃষ্ণাঙ্গরা।
মোরাদাবাদের ঘটনার পরে উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা ইমরান মাসুদ ভিডিয়ো বার্তায় বলেছেন, এইরকম একটা ঘটনা যে গোটা মুসলিম সমাজকে বদনাম করে দিতে পারে, সেটা কি কেউ মোরাদাবাদের লোকদের বলে নি?
আমিও সেই সূত্র ধরে সাহস করে প্রশ্ন করতে চাই, রাজাবাজার, খিদিরপুর, গার্ডেনরিচ কবে বুঝবে?
লকডাউনের সবচেয়ে সঙ্কটময় দুটি সপ্তাহ আগে দাঁড়িয়ে বোধহয় রাজাবাজার, খিদিরপুর,একবালপুরের মানুষকে ভাবতে হবে কি হচ্ছে? কেন কলকাতায় একেবারে সিল করে দেওয়া পাড়ার তালিকায় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা বেশি?
এই সব সংখ্যালঘু প্রধান এলাকার মানুষদের বুঝতে হবে যে সহনাগরিক তাঁকে, তাঁর পরিবারকে লকডাউন মানতে বলছেন, ঘরে থাকতে বলছেন, আসলে তিনি চান ওঁরা সুস্থ থাকুন। করোনায় সংক্রামিত না হন।
আর যে তথাকথিত প্রগতিশীল রাজাবাজার, একবালপুরের মানুষকে বিধিনিষেধ না মানতে প্ররোচিত করছেন, বলছেন সরকারের কথা শুনো না, তিনি চান না সংখ্যালঘুরা ভাল থাকুক।
রাজাবাজারের গ্যাস গলি কিংবা গার্ডেনরিচের ফুটপাথ থেকে কোনও সংক্রামিতকে তুলে বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালে পৌছে দিতে হলে পুলিশই দেবে, কোনও বিপ্লবী নয়।
আসলে পশ্চিমবঙ্গে একটা বিচিত্র জোট সবসময় লকডাউন খারাপ, সরকারি বিধিনিষেধ মানতে হবে না বলে প্রচার করে চলেছে। এই তথাকথিত প্রগতিশীল, নকশালরা কোনওদিন নারকেলডাঙার গলিঘুঁজিতে, বেলেঘাটার বস্তিতে ঢোকেননি। এদের কাছে ওই এলাকার সংখ্যালঘুরা একটা রাজনীতির হাতিয়ার, ফেসবুকীয় বিপ্লবীদের কাছে সরকার বিরোধিতার অস্ত্র।
এর উপরে আছে প্রগতিশীল বড় কাগজ।
যাদের কাছে মোদী এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সব খারাপ।
একটা ছোট্ট তুলনা টানি। বিজেপি তো বেশ কয়েকজন মুসলিমকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করেছে, নাজমা হেপতুল্লার মতো অনেককে রাজ্যপাল করেছে, কালামকে রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত করেছে…
বড় কাগজ তার নব্বই বছরের ইতিহাসে কোনও মুসলিমকে সম্পাদক করেছে? সম্পাদক ছেড়ে দিন, বার্তা সম্পাদক করেছে? চিফ রিপোর্টার করেছে?
সেই বড় কাগজ ধর্মনিরপক্ষেতার শিক্ষা দেবে?
সবাই জানেন ভারতবর্ষে করোনা রোগীদের মধ্যে কতজন তবলিগ-ই- জামাতের থেকে সংক্রামিত হয়েছেন।
কিন্তু আমি বিশ্বাস করি তবলিগ-ই-জামাতের অনুষ্ঠান একটা ভুল ছিল। সেখান থেকে করোনা ছড়ানোটা একটা দুর্ঘটনা।
কিন্তু নারকেলডাঙায়, একবালপুরে বা হাওড়ার বিভিন্ন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় লকডাউন না মানা, সংক্রমণ বাড়তে থাকাটার পিছনে কি কারণ?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম লড়াইতে নেমেছেন। কারণ তাঁর রাজনৈতিক উত্থান সিপিএমের সঙ্গে লড়াই করে। এবার তাঁকে সেই প্রতিপক্ষের পাশাপাশি লড়তে হচ্ছে গুজবের সঙ্গেও|
সেই লড়াইতে কেন নারকেলডাঙা, রাজাবাজার, বেলগাছিয়া পাশে দাঁডাতে পারে না??
অন্য একটা কথা দিয়ে শেষ করি|
এই যে প্রগতিশীলরা সবসময় মোদী সরকারকে সবসময় গাল পাড়ছেন, মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত কেন আর্ন্তজাতিক উড়ান চালু রাখা হয়েছিল, ইরানে আটকে পড়া কাশ্মীরিদের কে ফেরাতো?
আর করোনা অতিক্রান্ত ভারতবর্ষে সরকার যদি নির্মাণশিল্পে জোর দেয়, কারা কাজ পাবে?
মুর্শিদাবাদ, মালদহের শ্রমিকরা তো নির্মাণশিল্পেই বেশি কাজ করেন, তাই তো?
রাজাবাজার, একবালপুরের মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাঁরা করোনার রেড জোন থেকে বেরিয়ে আসতে চান কি না?
ইমরান মাসুদ কিন্তু তাঁর ভিডিও বার্তায় পরিষ্কার বলেছেন, তিনি চান তাঁর সম্প্রদায়ের মানুষ করোনা উত্তর ভারতবর্ষের সুশীল নাগরিক হোন।
আসলে এটাই তো সুযোগ সবার কাছে প্রমাণ করার, দায়িত্বশীল হওয়ার।