চ্যানেল হিন্দুস্তান ব্যুরো
ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় আজ হাইকোর্টে জোর ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে হাইকোর্টের রায়কে পুনর্বিবেচনা করার আর্জি জানিয়েছিল রাজ্য। যদিও আজ সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে ১৮ জুনের নির্দেশ বহাল রাখল হাইকোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ। পাশাপাশি পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানোয় রাজ্য সরকারকে তীব্র ভর্ত্সনা করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল।
আজ শুনানির শুরুতেই আদালতে একটি তালিকা পেশ করে রাজ্য। সেখানে জানানো হয়েছে, ভোট পরবর্তী হিংসার প্রেক্ষিতে কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য সরকার ও কতজনকে ঘরে ফেরানো হয়েছে। এই তালিকা প্রসঙ্গে বিচারপতি রাজেশ বিন্দল বলেন, “এ সব কিছু দেখতে চাই না।
যেভাবে তদন্ত হয়েছে, তা সঠিক নয়। পুলিশ এফআইআর দায়ের করেনি। এত গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি। এত লুকোচুরি কেন? এর মানে আপনারা অভিযোগকারীদের বক্তব্যই শুনছেন না। রাজ্যের আশ্বাসে আদালত ভরসা রাখতে পারছে না। শেষ যে নির্দেশ ছিল, সেটাই বহাল থাকবে।”
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশ হয়েছে ২ মে। তারপরই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অশান্তির অভিযোগ তুলতে শুরু করে বিজেপি। এমনকী, তা নিয়ে সরব হয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও। বিজেপির অভিযোগ, ফলপ্রকাশের পরই রাজ্যের একাধিক জায়গায় বিজেপি কর্মীদের উপর হামলা চালানো হচ্ছে।
তাদের ঘর-বাড়ি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মে মাসে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এরপর এন্টালিতে ভোটের পর ঘর ছাড়াদের ঘরে ফেরানোর জন্য ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট।
সেই কমিটিতে ছিলেন জাতীয় ও রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের সদস্য এবং স্টেট লিগাল সার্ভিসেস অথরিটির একজন প্রতিনিধি। ওই কমিটির কাছে যাতে অভিযোগ পৌঁছয় তার জন্য একটি ইমেল আইডি চালু করা হয়েছিল। সেখানে ৩ হাজারের বেশি অভিযোগ জমা পড়ে।
এদিকে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে তোগ দেগেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, “ভোটের পর রাজ্যে কোনও হিংসা হয়নি, পুরোটাই বিজেপির গিমিক।”
তারপর কমিটির কাছে আসা ওই অভিযোগুলি দেখে হাইকোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় রাজ্য সরকারকে। বিচারপতি রাজেশ বিন্দল বলেছিলেন, “আমাদের পর্যবেক্ষণে ভোট-পরবর্তী হিংসার প্রমাণ রয়েছে। অথচ গোড়া থেকে হিংসার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল রাজ্য। লিগ্যাল সার্ভিস রিপোর্টও রাজ্যের যুক্তির সঙ্গে মেলেনি।”
তারপর ১৮ জুন আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন একটি দল বা কমিটি গঠন করবে। তারা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে হিংসার রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করবে। কেন্দ্রীয় দলের রিপোর্টে কী উঠে এল তা ৩০ জুনের মধ্যে আদালতে জমা দিতে হবে। তাদের সাহায্য করবে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন ও পুলিশ। কোনও অসহযোগিতার অভিযোগ উঠলে তার দায় নিতে হবে রাজ্যকেই। আর এই নির্দেশ না মানলে রাজ্যের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হবে।
এরপরই রবিবার রাজ্য সরকারের তরফে ১৮ জুনের ওই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হয়। যদিও আজ সেই আর্জি খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। পাশাপাশি রাজ্য সরকারের উপর আদালতের কোনও ‘আস্থা’ নেই বলেও বেঞ্চের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এই বিষয়ের তদন্ত করলে সেক্ষেত্রে রাজ্যের কোথায় আপত্তি রয়েছে তাও জানতে চেয়েছে আদালত। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৩০ জুন।