ঈষানিকা ভোরাই
কয়েক মাস আগের কথা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন মুম্বইতে বণিকসভার এক সংগঠনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছেন। ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠান শেষে হঠাৎই উপস্থিত হলেন দেশের সর্ববৃহৎ শিল্পপতি মুকেশ আম্বানির এ্যান্টিলার প্রাসাদে।আম্বানির মত এক শিল্পপতির সঙ্গে তাঁর বাসভবনে বৈঠক চলল প্রায় ঘণ্টা দুয়েক। শুধু চতুর্থ বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে উপস্থিত থাকাই নয়, সেদিন এরাজ্যের বিনিয়োগের জন্য মুকেশ আম্বানিকে আরও একবার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী। সরকারের পক্ষ থেকে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাসও দেন তিনি। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, ঐ দিন মুকেশ আম্বানির মুম্বইতে থাকার কোনও কথাই ছিল না। এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পুরো আম্বানি পরিবার ছিল আমেরিকায়। শুধুমাত্র মমতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলেই মুকেশ আম্বানি মুম্বইতে থেকে যান। ঠিক তার পরের দিন মমতা উপস্থিত হলেন আরও এক শিল্পপতি সজ্জন জিন্দালের বাড়ি। মিলিত হলেন জিন্দাল পরিবারের সবার সঙ্গে। একেবারে পারিবারিক আড্ডা!
এর মাসখানেক পরের কথা। মুখ্যমন্ত্রী তখন লন্ডনে গিয়েছেন ভগিনী নিবেদিতার বাড়ির “ব্লু-পাক” অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। সেখানেই সময় করে চলে গেলেন পৃথিবী বিখ্যাত স্টিল টাইকুন লক্ষীনিবাস মিত্তালের বাড়ি। আহ্বান জানালেন রাজ্যে আসার ও বিনিয়োগ করার।
এগুলো আসলে কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। পশ্চিমবঙ্গে শিল্পায়নের লক্ষ্যে মমতা তাঁর মোক্ষম অস্ত্র প্রয়োগ করেছিলেন শিল্পপতিদের সঙ্গে তাঁর এই আলাপচারিতায়। আসলে ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপন ও তা রক্ষা করাও একটা শিল্প! আর সেই আর্টে মমতার মত একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যতটা সাবলীল সেটা কিন্তু শিক্ষনীয়। অন্তত তাঁকে যাঁরা নিবিড় ভাবে জানেন তাঁদের অভিমত এমনটাই। চতুর্থ বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে জিন্দাল, আম্বানি বা মিত্তালদের উপস্থিতি ও বিনিয়োগের আশ্বাসের পিছনে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরোয়া ব্যক্তিত্বের এই ব্যক্তিগত স্পর্শ কিন্তু অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করছেন নবান্নের শীর্ষকর্তারা।