দেবক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশেষ কলাম :
কাব্য রসিকেরা বলেন, সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি। তবে এই আপ্তবাক্যটি বেশ কয়েক বছর আগে নস্যাৎ করে দিয়েছেন এই সময়েরই এক অভিভাবকপ্রতিম প্রবীন কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।
তাঁর কবিতার ক্লাস গ্রন্থে তিনি ‘সদর্পে'(!) ঘোষণা করেছেন, কেউ কেউ কবি নয়, সকলেই কবি।
এমনিতে লোকে বলে, বাঙালি মাত্রই কবি! আর বাঙালি রাজনীতিকরা? বাঙালি রাজনীতিকদের অনেকেই কবিতার চর্চা করতেন বা এখনও করেন। সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কবিতা-প্রেম তো সুবিদিত। প্রতীমবাবু , রাজ্যের প্রাক্তন দমকল মন্ত্রী, তাঁরও কবিতার প্রতি টান খুবই গভীর। রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী, সুদর্শন রায়চৌধুরির কবিতা লেখার হাত চমৎকার। বর্তমান শিল্পমন্ত্রীও কবিতার সমঝদার। অধুনা তৃণমূল নেতা নির্বেদ রায়, তিনি তো ফুলটাইম সাহিত্যিক। তাই তাঁর কথা আর এখানে আলাদা করে তোলার দরকার নেই। রসিক নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কাব্যিক রসবোধ যে কোনও তথাকথিত বুদ্ধিজীবীর কাছে ঈর্ষনীয়।
শুনলে অবাক লাগতে পারে কংগ্রেসের ডাকাবুকো রবিনহুড অর্থাৎ অধীর চৌধুরীও কবিতা লেখেন। তবে অণুকবিতা। খাতায় কলমে লেখেন না, লেখেন মোবাইলে। কখনও কখনও পাঠান এসএমএস করে! ব্রাত্য বসু, কোনও পার্টিতে মুডে থাকলে উদাত্ত কণ্ঠে শক্তি চট্টোপাধ্যায় শোনান। তবে ব্রাত্যকে এই আলোচনায় ব্রাত্য রাখাই ভাল! তিনি প্রথমত একজন উঁচুমানের শিল্পী তারপর তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়। একই যুক্তিতে বাদ রাখা যায় দীপা দাশমুন্সিকেও। একদা আরামবাগের শেষ কথা অনিল বসু , তিনিও কবি। যতই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কুকথা বলুন, তাঁরও একটি কবিতার খাতা আছে!
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাব্যচর্চাও সুবিদিত। তাঁর রচনার একটি সরল ও সহজিয়া ধরণ আছে যা একেবারেই মৌলিক। এই মৌলিকতাই তাঁর কবিতার সার্থকতা।
প্রশ্ন হল
মুকুল রায় কী কবিতা লিখেছেন কখনও! সম্ভবত না। তবে ইদানীং মুকুলকে আক্রমণ করতে গিয়ে তৃণমূলের বেশ কিছু নেতা এমন তুলনা টানছেন যা কোনও অংশে কম কাব্যিক নয়!
ফিরহাদ হাকিম তৃণমূলকে তুলনা করছেন পবিত্র গঙ্গার সঙ্গে আর মুকুলকে বলছেন সেই গঙ্গার এক বালতি জল। যা শুনে মুকুলমহল খুশি। তারা বলছে,’ তাহলে ববি (ফিরহাদ) স্বীকার করছেন মুকুলদা গঙ্গাজলের মত পবিত্র! তা হোক না এক বালতি।”
দলে অতি ভদ্র, সজ্জন নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় আবার গঙ্গার পবিত্রতা পেরিয়ে পৌঁছে গেছেন সমুদ্রের বিশালতায়! তিনি বলেছেন, তাঁর দল সমুদ্র আর মুকুল সেই সমুদ্র থেকে তোলা এক বালতি জল। মুকুলকে আক্রমণ করতে গিয়ে যে সব উপমা ব্যবহৃত হচ্ছে তা অবশ্যই কাব্যগুণান্বিত। অন্তত ছোট পত্রিকার সম্পাদক থেকে বাজারি পত্রিকার নামজাদা কবি সকলে এমনটাই বলছেন। মুকুলমহলও অবশ্য ছাড়ার পাত্র নয়। তাঁরা বলছেন,”মুষ্টিযোদ্ধা শোভনদেব, দলের আভ্যন্তরীণ লড়াইয়ে দোলা সেনের কাছে এতবার নকআউট হয়েছেন যে তৃণমূলকে এখন তাঁর নোনা লাগছে! তাই সমুদ্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন।”
মহাকবি কালিদাস ছিলেন উপমার জন্য বিখ্যাত। বলা হয়, উপমা কালিদাসস্য! এই সব তৃণমূল নেতারাও উপমা ব্যবহারে তাঁদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন।
শীতকালও এল বলে! কবি সম্মেলন শুরু হওয়ার আগেই, মুকুল রায়ের কল্যাণে রাজ্য রাজনীতির গুপ্ত কবিরা মাথা তুললেন!
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তো কবেই লিখে ফেলেছেন, কেউ কেউ কবি নয়, সকলেই কবি।
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
https://www.youtube.com/channelhindustan
https://www.facebook.com/channelhindustan