পার্থসারথি পাণ্ডা :
কলম-তুলির জাদুতে দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে বাঙালির রসিক মনকে মজিয়ে রেখেছিলেন ব্যঙ্গচিত্রের জাদুকর চণ্ডী লাহিড়ী। কিন্তু গত বৃহস্পতিবারের নীরস একটি দুপুরে কলম-তুলি-র জাদুপুটলি গুটিয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন ব্যঙ্গচিত্রের এই মহান জাদুকর। তাঁর বয়স হয়েছিল ছিয়াশি বছর।
চণ্ডী লাহিড়ীর জন্ম নবদ্বীপে, ১৯৩১ সালে। ঋজু মেরুদণ্ড নিয়ে মাথা উঁচু করে চলার শিক্ষা ছোট থেকেই পেয়েছিলেন তিনি। তাই মাত্র তের বছর বয়সেই স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেবার সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলেন। তখনই বোমা বাঁধতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। বাঁ হাতটি চিরতরে হারান। তাঁর লড়াকু মন তাঁকে জীবনের কোন প্রতিবন্ধকতার কাছেই মাথা নত করতে দেয়নি। তাই যে ‘হতভাগ্য দেশে কার্টুন শিল্পীরা জীবদ্দশায় স্বাচ্ছন্দ্যের মুখ দেখেন না’, সেই দেশেই তিনি সাহস করেছিলেন কার্টুনিস্টের কলম হাতে তুলে নিতে।
ছয়ের দশকে ‘হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড’ আর ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’-য় কার্টুন আঁকা দিয়ে তাঁর পেশাগত জীবন শুরু। সংবাদপত্রের পাতায় বাংলা ভাষায় ‘পকেট কার্টুন’ প্রবর্তনের কৃতিত্ব তাঁরই। কার্টুনের মাধ্যমে যে, ভারতবর্ষের সমাজ-ধর্ম-রাজনীতির আনাচকানাচ পাঠকের রসিক মনে পৌঁছে দেওয়া যায়, এটা তাঁর ‘ভিজিট ইন্ডিয়া উইথ চণ্ডী’-বইটি প্রমাণ করে দিয়েছে। তাঁর আঁকা সংবাদপত্রের পকেট কার্টুন যেমন পাঠকমহলে সাড়া ফেলেছিল, তেমনি তাঁর আঁকা বইয়ের প্রচ্ছদ, অলংকরণ, এমনকি সিনেমার টাইটেলও সমান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। কার্টুন শিল্পে তাঁর নিজস্ব ঘরানা তৈরি করেছিলেন তিনি।
তুলির সঙ্গে সমান তালে চলত তাঁর কলম। বড়দের জন্য ‘বাঙালির রঙ্গব্যঙ্গচর্চা’, ‘গগনেন্দ্রনাথের কার্টুন ও স্কেচ’ নিয়ে গবেষণামূলক বই যেমন তিনি লিখেছেন, তেমনি ছোটদের জন্য সৃষ্টি করেছেন ‘মিচকে’ ও ‘নেংটি’। সন্দেশ পত্রিকায় লিখেছেন ‘টারগেট’ ও ‘জলহস্তী’ জলহস্তী-র মতো কার্টুন-কমিকস।
ছোটবড় সকলের প্রিয় এই মানুষটি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেও বাঙালির মনে ব্য়ঙ্গকৌতুকের জোগান দিতে চিরকাল থেকে যাবেন তিনি।
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
https://www.youtube.com/channelhindustan
https://www.facebook.com/channelhindustan