নিজস্ব সংবাদদাতা:
অসম হত্যাকাণ্ডের পর এনআরসি-র ভেলায় ভেসে উঠেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! ঘটনা যেহেতু অসমে অতএব পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গে মনে হয়েছে—ওই ৫ জনের মৃত্যুর কারণ অবশ্যই এনআরসি। নিন্দুকেরা বলতে শুরু করেছে, দুম করে ব্রহ্মপুত্রের জল কমে গেলে, কিংবা ভূপেন হাজারিকার দেশে বৃষ্টি কম হলেও এনআরসি-কেই দায়ী করবেন তৃণমূল নেত্রী। মুকুল রায় আজ যেমন বললেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবার ঘোলা জলে মাছ ধরতে ভালোবাসেন।’
পাশাপাশি অসম হত্যাকাণ্ডের চরম নিন্দাও করেছেন মুকুল। বলেছেন এই ঘটনা কাপুরুষোচিত, বর্বর কাজ। মনে করিয়ে দিয়েছেন, এর সঙ্গে এনআরসির কোনও যোগ নেই। এই বিষয়ে আরও কিছু বলার রয়েছে, তবে তার আগে জানানো উচিত যে মুকুল রায় আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে ‘ঘোলা জলে মাছ ধরা’ ছাড়াও আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উক্তি করেছেন। মমতা সম্পর্কে মুকুলের উক্তির বরাবরই একটি অন্য মাত্রা এনে দেয়। ইনি হলেন সেই মুকুল রায় যাঁকে এক সময় দিনে ৫০০ বার ফোন করতেন মমতা (সত্ত্ব: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)।
যাই হোক আসল কথা হল মমতা কতখানি কৌশলী রাজনীতিবিদ, কত ভালো ছবি আঁকতে পারেন, কী অসাধারণ কবিতা লেখেন সে সম্পর্কেও হয়তো মুকুলের থেকে বেশি জানা বা বোঝা লোক এরাজ্যে তথা এদেশে কমই আছে। তো এহেন মুকুল রায় শুক্রবার, পুরুলিয়ায় বলেন, “মমতা নাগরিক সমস্যা জিইয়ে রাখতে ভালোবাসেন।” বিশেষত যদি সেই সমস্যা ভালো রাজনৈতিক ইস্যু হয়। সেই কারণেই নাকি এনআরসির বিরোধিতায় সোচ্চার তৃণমূল নেত্রী। মুকুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল এনেছেন সাধারণ মানুষের নাগরিকত্ব সুরক্ষিত করার জন্য। সেই এনআরসি-র বিরোধিতায় উঠে পড়ে লেগেছেন মমতা।’ মুকুলের আরও বক্তব্য, ‘মমতা চাননি সাধারণ মানুষের নাগরিকত্ব সুরক্ষিত হোক।’ প্রকারান্তরে বলতে চাইলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সমস্যার সমাধান চান না। মুকুলের মতে, ‘সুরাহা চান না মমতা।’
ফেলেও দেওয়া যায় না এই বিজেপি নেতার বক্তব্য। যেমন এদিন মুকুল আরও বলেন, ‘ওঁকে (মমতা) এনআরসি-র ফুল টার্মটা জিজ্ঞেস করুন তো…।’ এমনকী ‘এনআরসি খায় না মাথায় দেয়, তা মমতা জানে!’
এমন ভাবে বললেন কথাগুলো যেন এনআরসি ফুল ফর্ম মুখ্যমন্ত্রী সত্যিই জানেন না! যেন এবিষয়ে তাঁর একেবারেই জ্ঞানগম্যি নেই! বেফালতু চিৎকার করছেন! তবে অসম হত্যাকাণ্ড নিয়ে সোজাসাপটা জবাব দিলেন বিজেপি নেতা। স্পষ্টত জানালেন এই হত্যাকাণ্ড যারা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে অসম সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার। তবে এই ঘটনার সঙ্গে যে এনআরসি-র কোনওরকম যোগ নেই তাও জানাতে ভুললেন না। মুকুল বলেন, ‘অসম থেকে একজনও বাঙালিকে উৎখাত করা হবে না। বরং পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।’ এইখানে এনআরসি ও বিজেপি দলটিকে নিয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে দেওয়া প্রয়োজন।
যেমন, অসমে বাঙালি বিদ্বেষ আজকের ঘটনা নয়, এর আগেও বড়সড় গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে সেখানে। দ্বিতীয়ত, অসম অ্যাকর্ড রাজীব গাঁধীর করা। আজকের এনআরসি হচ্ছে সেই অনুযায়ী। এর চেয়ে বড় কথা, অতীতে বিজেপি নীতিগত ভাবে এনআরসি-র বিরোধিতা করে এসেছে। তার জলজ্যান্ত উদাহরণ একটা সময় বিরোধী দলগুলি ধুয়ো তুলেছিল বিজেপি ইচ্ছে করে এনআরসি পিছোতে চাইছে। প্রকৃত প্রস্তাবে প্রথম তালিকার পর আদালতে বিষয়টির উপর স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু সুপ্রিমকোর্ট সে অনুমতি দেয়নি। এইসঙ্গে উল্লেখ্য, গত ২৫ অক্টোবর আলফা নেতা মৃণাল হাজারিকা বিজেপিকে হুমকি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, প্রয়োজনে ১৯৮৩ ফেরাতে হবে। গণহত্যা করতে হবে যদি অসম দখল করার জন্য বিজেপি-আরএসএস বাঙালি হিন্দুদের নিয়ে বাড়াবাড়ি করে।
এরপরই বৃহস্পতিবার তিনসুকিয়ায় ৫জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হল!