দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় ও নীল বণিক :
বিজেপির কংগ্রেস মুক্ত ভারতের পাল্টা কোনও স্লোগান কংগ্রেস থেকে উঠে আসেনি। বরং তৃণমূল স্লোগান তুলেছে, বিজেপি ভারত ছাড়। তার আগে অবশ্য নীতিশ কুমারের সঙ্ঘমুক্ত ভারতের স্লোগান রাজনীতি বাজারে এসেছিল। তবে নীতিশ যেহেতু আবার বিজেপির সঙ্গ করাই শ্রেয় মনে করেছেন তাই তাঁর সঙ্ঘমুক্তির ডাক আপাতত অতীত। তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য রাজ্য জুড়ে ‘বিজেপি ভারত ছাড়’-র কর্মসুচী চালিয়ে যাচ্ছে। ব্লকে ব্লকে মিছিল -মিটিং ইত্যাদি চলছে। গণতন্ত্রে এটাই স্বাভাবিক, এটাই দস্তুর। তৃণমূল কংগ্রেস তাদের রাজনৈতিক অবস্থান অনুযায়ী মিটিং-মিছিল করে জনমত তৈরি করবে, বিজেপিকে রোখার চেষ্টা করবে, গণতন্ত্রে এটাই নিয়ম।
গোল বাঁধছে অন্য জায়গায়। প্রশ্নও উঠছে। প্রথমে মোহন ভাগবত আর তারপর অমিত শাহের সভার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা বরাদ্দ না করে তৃণমূল কী রাজ্যে সঙ্ঘ এবং বিজেপির কণ্ঠরোধ করতে চাইছে! মোহন ভাগবতের জন্য মহাজাতি সদনে এবং অমিত শাহের জন্য প্রথমে ইনডোর স্টেডিয়াম ও পরে নজরুল মঞ্চের অনুমতি না দিয়ে রাজ্য সরকার কী বিরোধী শক্তিকে চুপ করাতে চাইছে! এমনিতে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস আপাতত তাদের দলের কেন্দ্রীয় কৌশলের কারণে আপাতত তৃণমূলের আঁচলেই নিজেদের দলের তরী বেঁধেছেন। চির প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমকেও এখনও ফিস ফ্রাইয়ের গন্ধে মজিয়ে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সিপিএমকে এখন রাস্তায় নেমে আন্দোলন করার অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন মমতা, আবার পুলিশকে দিয়ে লাঠিপেটাও করাচ্ছেন তিনি। সিপিএমও সম্ভবত একটি বিখ্যাত বাউল সঙ্গীত মনে রেখে মমতার মধ্যে একই সঙ্গে সর্প দেখছেন আবার ওঝাও দেখছেন। ফলে রাজ্যে একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য বিরোধী শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি। বামেরা মোদি ও দিদির গোপন আঁতাতের তত্ত্ব এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিকই তবে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা যেহেতু এখন তলানিতে তাই তাদের বক্তব্যের গ্রহনযোগ্যতাও অতীব ক্ষীণ। বিজেপিকে যেহেতু এখনও পকেটস্থ করা যায়নি তাই কী তাদের চুপ করিয়ে রাখতে উঠে পড়ে লেগেছে তৃণমূল!
তখন রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার। সেই সময় সৌগত রায় প্রায় অভিযোগ করতেন বিধান সভায় সরকার কথা বলতে দিচ্ছে না। একই সঙ্গে সৌগত মন্তব্য করতেন, এভাবে মুখ বন্ধ করে রাখার কারণেই মাথা তোলে উগ্র শক্তিগুলি।
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পদ্ম পুরস্কার প্রাপ্তির বেনজির বিরোধিতা করেছিল তৃণমূল। সেই সময় কলকাতায় এসে প্রণব কারও নাম না করে মন্তব্য করেছিলেন, গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত হল পরমত সহিষ্ণুতা। শুনে কারও কারও মনে হয়েছিল, ‘গণতন্ত্র রক্ষার’ আন্দোলনে নেমেছেন যে নেত্রী তাঁকে গণতন্ত্রের পাঠ দিয়ে গেলেন প্রণব।
এখন প্রশ্ন উঠছে যে কোনও অছিলায় বিরুদ্ধ শক্তির মুখ কেন বন্ধ করতে চাইছে তৃণমূল!
ভয়? গা-জোয়ারি? নাকি গণতান্ত্রিক ভাবে ‘বিজেপি ভারত ছাড়’ নামক রাজনৈতিক কর্মসূচীটি সম্পাদন করা সোনার পাথরবাটি বুঝতে পেরে, নিজের এলাকায় দাদাগিরির সহজ পথটি বেছে নিতে চাইছে মমতার সরকার!
প্রশ্ন সব মহলে।
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
https://www.youtube.com/channelhindustan
https://www.facebook.com/channelhindustan