পার্থসারথি পাণ্ডা

মহালয়া মা দুর্গা, দেবী দুর্গার আগমনী সংবাদ যেমন বয়ে আনে, তেমনই সে স্মরণ করায় আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়া স্বজন ও পিতামাতাকে। শুধুই স্মরণ করায় না, তৃষ্ণার জল-যাচনা নিয়ে আমাদের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়। আচ্ছা, আমাদের প্রিয় মানুষগুলো আমাদের ছেড়ে কোথায় চলে যায়।চিরদিনের জন্য? আমরা জানি না। স্বর্গ কোথায়? তাও জানি না। এতদিনে পুরাণের গল্প ছাড়া পাতালে জল, আকরিক, গ্যাস ছাড়া মর্ত্যলোকের মতো কোন বাসযোগ্য পাতাললোক আমরা খুঁজে পাইনি। মানুষ আর দেবতাদের মতো কল্পিত দানবদের দেখাও আমরা মাইলের পর মাইল মাটি খুঁড়ে খুঁজে পাইনি। আমাদের অনেক না-পাওয়া সত্বেও আমাদের আজন্মের বিশ্বাস কিছুতেই টলে না, মিথ হারায় না। হারায় না আমাদের স্বর্গত পূর্বপুরুষদের সঙ্গে স্বর্গে গিয়ে মিলনের আকাঙ্ক্ষা। শেষ হয় না মৃত্যুর পরও তাঁদের মুক্তির চিন্তা। কবি লিখেছিলেন যে, ‘তোমার মহাবিশ্বতলে হারায় নাকো কিছু’ — এটা যেন আমাদের সনাতন আতমার কথা, আদিম দর্শন। তাই আমাদের পূর্বপুরুষ পিতৃপুরুষেরা মরেও মরেন না, বেঁচে থাকেন আমাদের আদিম চেতনায়। তাঁদের আহার- তেষ্টার কথাও আমাদের ভাবায়। তাই মৃত্যুর পর পিণ্ড দিই, নিয়ম করে বছরে একবার আমরা তাঁদের স্মরণ করি, তাঁদের পিপাসা মেটাই, সেজন্যই মহালয়ার পিতৃপক্ষে তর্পণ করি।
আচ্ছা, এই যে স্মরণ, এটা ধর্মীয়রীতির বাইরে নিতান্তই ঘরোয়া ভাবে কি স্মরণ করা যেত না? যেত না কেন, নিশ্চয়ই যেত। তবে তা ধোপে টিঁকত না। কিছুদিন পর তা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যেত। যেভাবে স্মৃতিসভার অনুষ্ঠান মৃত্যুর একবছরের পর হামেশাই আর গা করে না আয়োজন করতে, তেমনি করেই বন্ধ হয়ে যেত। মহালয়ার সঙ্গে যেহেতু পুণ্য-মোক্ষ-আত্মশুদ্ধি জড়িয়ে আছে, তাই তা বয়ে চলেছে ধর্মীয় আবেগ আর বিশ্বাসের হাত ধরে। তবে, পিতৃপক্ষে তর্পণের জল পান করতে পূর্বপুরুষ আসুন আর নাই- আসুন, আমাদের কাছে মোক্ষপথ খুলুক আর নাই- খুলুক, এই উপলক্ষ্যে আমাদের চেতনায়, স্মৃতিতে বেঁচে ওঠেন। এভাবেই রীতির হাত ধরে বংশানুক্রমে চলতে থাকে এই বেঁচে ওঠার পালা, স্মৃতি-সত্তায় জড়িয়ে থাকার ধারা, বাঁচিয়ে রাখার ধারা।

Channel Hindustan Channel Hindustan is Bengal’s popular online news portal which offers the latest news