দেবক বন্দ্যোপাধ্যায়:
সোমেন মিত্র শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার পর প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতির আসন শুন্য।
সোমেনের সমগোত্রীয় কোনও নেতা এখন আর পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসে নেই, সে কথা এক বাক্যে দলের সকলেই স্বীকার করেন। প্রিয়-সোমেন যুগ এখন রাজ্য কংগ্রেসে অতীত। তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মের বা প্রায় সমবয়সী নেতাদের মধ্যেই সভাপতি পদের যোগ্য দাবিদার রয়েছেন। প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য যেমন রয়েছেন তেমনই রয়েছেন আর এক প্রাক্তন সভাপতি অধীর চৌধুরী। রয়েছেন অভিজ্ঞ রাজনীতিক দেবপ্রসাদ রায়, রয়েছেন শঙ্কর মালাকার, আবদুল মান্নান এবং আবু হাসেম খান চৌধুরী, মালদার ডালুবাবু। এঁদের মধ্যে প্রদীপ ভট্টাচার্য বয়েসে সবচেয়ে প্রবীন এবং অভিজ্ঞতাতেও সকলের চেয়ে সিনিয়র। তাঁর নামের সঙ্গে অবশ্য একটি ‘কিন্তু’ জুড়ে রয়েছে। এখনও পর্যন্ত যা খবর একুশের নির্বাচনে বামেদের সঙ্গে জোট করেই তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করবে কংগ্রেস। সে ক্ষেত্রে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, রাজ্যসভার সদস্য হতে প্রদীপ ভট্টাচার্য কে তৃণমূলের থেকে যে সাহায্য নিতে হয়েছিল, মমতা বিরোধী লড়াইয়ে তা কোথাও অসুবিধা সৃষ্টি করবে না তো? তবে এই সংশয়ের বিরুদ্ধমত ও আছে। তাঁরা বলছেন, রাজনীতি তে অনেক সময় কৌশলগত অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। প্রদীপ ভট্টাচার্যের রাজ্যসভায় যাওয়ার সময় তৃণমূলের সমর্থনের বিষয়টিও তেমন। ওতে আন্দোলনে কোনও প্রভাব পড়বে না।
অন্যদিকে অধীর চৌধুরী এখন দিল্লিতে যে গুরুদায়িত্ব সামলাচ্ছেন, সেই দায়িত্ব পালনের পর আবার রাজ্যের দায়িত্ব সামলানো কতটা সম্ভব বা দুটো দায়িত্ব তিনি সমান ভাবে সামলাতে পারবেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এছাড়া তাঁর সম্পর্কে কয়েকটি অভিযোগ কংগ্রেস অফিসে কান পাতলে শোনা যায়। এক, তাঁর সভাপতিত্ব কালে কংগ্রেস অফিসের কর্মচারীরা ঠিক মত বেতন পান নি। অভিযোগ নম্বর দুই, তাঁর হয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ কেউ দল পরিচালনার কাজে হাত দিয়েছে, এমনকি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বিভিন্ন নির্দেশও পাঠিয়েছে। তা অনেকেই ভাল ভাবে নেন নি। অধীরের সময় কালেই অনেক নেতা ‘অসম্মানিত’ হয়ে দল ছেড়েছেন বলেও শোনা যায়। যদিও শত অভিযোগ সত্ত্বেও একটি কথা সকলকে মেনে নিতেই হচ্ছে অধীরই এই সময় পশ্চিমবঙ্গ থেকে খাতায় কলমে সবচেয়ে সফল নেতা। তাঁর বায়োডেটাই সবচেয়ে উজ্জ্বল।
অনেকে বলেন, কংগ্রেসে দেবপ্রসাদ রায়ের ভূমিকা অনেকটা কাব্যে উপেক্ষিতার মত। তাঁর রাজনৈতিক মস্তিষ্ক রাজ্য কংগ্রেসে তেমন ভাবে ব্যবহৃত হয় নি বলে অনেকের অভিমত। সিনিয়রিটির দিক থেকেও তিনি একবার সুযোগ পেতেই পারেন। কিন্তু বামেদের সঙ্গে জোট রাজনীতি করার ব্যপারে তিনি কতটা আন্তরিক হতে পারবেন, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন আছে।
আবদুল মান্নানও অধীরের মতোই একটি বড় দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তবে বামেদের সঙ্গে জোট করে লড়াই করার কৌশলের তিনি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রবক্তা।
প্রদেশ কংগ্রেস থেকে অনেকদিন স্বেচ্ছা নির্বাসনে রয়েছেন দীপা দাশমুন্সি। তাঁর পুত্র পিয়দীপ কিছুদিন আগে বিলেতের একটি কলেজ থেকে স্নাতক হয়েছে। তিনি সম্ভবত সংসার ও পুত্রের পড়াশোনার দিকেই বেশি নজর দিয়েছেন। কিংবা রাজনৈতিক ভাবে অনুধাবন করেছেন রাজনীতির পথে কিছুদিন স্থির থাকাই ভাল।
সভাপতির আসনের দিকে অনেকের নজর থাকলেও ওই আসন টি কাকে বসতে দিতে চাইছে, সে কথা যদি জানা যেত!
আসনের দিকে যাঁরা তাকিয়ে আছেন তাঁদের বাইরে একজন আছেন যাঁকে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে। যাঁর কথা শুনতে ভিড় করে আসে। যাঁর তৃণমূল ও বিজেপি বিরোধিতা নিয়ে কারও সংশয় নেই। বামেদের মহলে যাঁর মর্যাদা আছে। তৃণমূলের যাঁকে নিয়ে এলার্জি আছে। যিনি আসনে বসলে রাজ্য কংগ্রেস একদিনে চাঙ্গা হবে বলে অনেকে মনে করেন। সংবাদমাধ্যমও বেশি আগ্রহী হবে।
রাজনীতির খবর রাখিয়েরা এতক্ষণে ধরে নিয়েছেন এই বাইরে থাকা ব্যক্তি টি অরুণাভ ঘোষ ছাড়া আর কেউ নন। অরুণাভর গুণ থাকলেও দোষও কিছু আছে বলে শোনা যায়। তিনি বেলাগাম কথা বলেন। নির্দিষ্ট কোনও লাইনে চলা তার ধাতে নেই। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠরা (দলে তাঁর কোনও লবি নেই। ঘনিষ্ঠ বলতে যাঁরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন) এইসব অভিযোগের উত্তর দিয়েছেন। তাঁদের মতে দায়িত্ব পেলে অরুণাভ দা নিশ্চয়ই সেই দায়িত্বের মর্যাদা রাখবে। আসনে বসলে কী কথা বলতে হয় আর কী কথা বলতে নেই, তা তিনি জানেন।
তবে তাঁর ভক্তরা যাই বলুন দিল্লিতে অরুণাভর তেমন কোনও খুঁটির জোর নেই। কংগ্রেসে তিনি পার্শ্ব চরিত্র পেয়েই খুশি। তাঁর হয়ে বলারও কেউ নেই জনপথ বা তুঘলকে।
সভাপতির চেয়ার টি যদি কথা বলতে পারত, তাহলে সে কি অরুণাভর নাম বলত? সে প্রশ্ন অবশ্য রয়েই যাচ্ছে!