কমলেন্দু সরকার
:
মাঠে নেমেই ছক্কা হাঁকিয়ে ছিলেন সুচরিতা। চিনলেন না! সুমিতা সান্যাল বলতেই চেনা গেল। হ্যাঁ, প্রথম ছবিই ছিল মহানায়ক উত্তমকুমারের সঙ্গে। দার্জিলিঙে জন্ম মঞ্জুলার সঙ্গে খুব খাতির ছিল বিগত দিনের নামী অভিনেত্রী লীলা দেশাইয়ের। তিনিই অগ্রদূতের বিভূতি লাহার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন মঞ্জুলার। অগ্রদূত তখন উত্তমকুমারকে নিয়ে ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ করবেন ঠিক করেছিলেন। মঞ্জুলাকে পছন্দ হয়ে যায় বিভূতি লাহার। প্রস্তাব দিলেন নতুন ছবিতে অভিনয়ের। মঞ্জুলাও রাজি। কিন্তু অগ্রদূতের বিভূতি লাহা মঞ্জুলা নাম পরিবর্তন করে রাখলেন সুচরিতা। পরে কনক মুখোপাধ্যায় সুচরিতা থেকে সুমিতা করেছিলেন। এই নামেই তিনি হলেন বাংলা ছবির জনপ্রিয় অভিনেত্রী।
১৯৬০-এ ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ করার পর সুযোগ আসেনি সুমিতার কাছে। ১৯৬৩-তে করলেন তিনটি ছবি। দেয়ানেয়া, কাঞ্চনকন্যা আর আকাশপ্রদীপ। এর মধ্যে ‘দেয়ানেয়া’ সুপারডুপার হিট। মুম্বইয়ের নায়িকা তনুজার বন্ধুর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। বাংলা ছবিতে নায়িকা হওয়ার সুযোগ তেমন পাননি। বেশিরভাগ ছবিতে পার্শ্বচরিত্র করতেই দেখা গিয়েছিল সুমিতাকে। এ নিয়ে তাঁর অল্পবিস্তর ক্ষোভ ছিল একবার কথা প্রসঙ্গে বলেও ফেলেছিলেন। বলেছিলেন, বাংলা ছবির পরিচালকেরা এর বাইরে তো ভাবতেই পারলেন না আমাকে।
কিন্তু হিন্দি ছবির নামী পরিচালক হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায় দেখেছিলেন সুমিতার মধ্যে নায়িকা এলিমেন্টস। ‘আশীর্বাদ’ ছবিতে সঞ্জীবকুমারের বিপরীতে নির্বাচন বলেছিলেন, ‘আমি এমন একজনকে খুঁজছিলাম যার মধ্যে একটু পুরনো দিনের সৌন্দর্য থাকবে। অথচ তার ভেতর হালকা সেক্স আপিলও থাকবে। আমি সুমিতা সান্যাল ছাড়া কোনও বিকল্প পেলাম না।’ ১৯৬৮-তে সঞ্জীবকুমার হিন্দি ছবির নামী অভিনেতা।
হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায় পরেও সুমিতা সান্যালকে নিয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে ‘আনন্দ’-এ। ‘গুড্ডি’-তেও ছিলেন সুমিতা। যদিও এর আগে দিলীপকুমারের সঙ্গে করেছেন ‘সাগিনা মাহাতো (১৯৭০)।
সুমিতা সান্যাল অভিনয় করেছিলেন সত্যজিৎ রায়, তপন সিংহ, অসিত সেন, তরুণ মজুমদার, অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়, চিত্ত বসু, পীষূষ বসু, মঙ্গল চক্রবর্তী, সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ পরিচালকের ছবিতে। সুমিতা সান্যাল কতগুলো মনে রাখার মতো চরিত্র করেছিলেন বাংলা ছবিতে। তার মধ্যে—– ‘দেয়ানেয়া’য় বিশাখা, ‘অনুষ্টুপ ছন্দ’-এ সুচরিতা, ‘স্বর্গ হতে বিদায়’-এ শিপ্রা, ‘নায়ক’-এ প্রমীলা, ‘সাগিনা মাহাতো’য় বিশাখা, ‘কুহেলি’-তে সেবা। ‘কুহেলি’-তে সুমিতা পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছিলেন বিশ্বজিৎ, সন্ধ্যা রায়ের সঙ্গে। সেইসময় বিশ্বজিৎ-সন্ধ্যা রায় বাংলা ছবির সুপার হিট জুটি।
সুমিতা সান্যাল খুব বেশি ছবি করেননি। তাঁর অভিনীত ছবির সংখ্যা গোটা চল্লিশেক। সম্ববত তাঁর শেষ ছবি ‘দাগী’ (১৯৯৫)। তিনি যুক্ত ছিলেন ‘রঙ্গসভা’ নাট্যদলের সঙ্গে।
অভিনেত্রী সুমিতা সান্যাল প্রয়াত হলেন তাঁর দক্ষিণ কলকাতার বাসভবনে। দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২। তাঁর মৃত্যুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করেছেন।
Channel Hindustan Channel Hindustan is Bengal’s popular online news portal which offers the latest news