দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় নীল বণিক :
মুকুল রায়কে দলের ভেতর গুরুত্বহীন করার প্রক্রিয়া এবার চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলিতে তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর, নতুন করে তাঁকে আর কোনও কমিটিতে রাখা হয়নি। এইভাবে দিল্লির রাজনীতিতে তাঁকে গুরুত্বহীন করা হয়েছে। অন্তত সংসদীয় রাজনীতিতে তো বটেই।খাতায় কলমে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের তিনি এখনও সহসভাপতি। এই পদের কোনও গুরুত্ব যদি তৃণমূল কংগ্রেসে থাকে তাহলে দলীয় পর্যায়ে তাঁর এখনও কিছুটা গুরুত্ব আছে বলতে হয়! শুধুমাত্র দিল্লি নয়। এবার মুকুলের নিজের জেলাতেও তাঁকে অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলার আয়োজন করেছে দল।
ভাটপাড়ার বিধায়কের সঙ্গে মুকুলের অহি-নকুলের সম্পর্ক দলে কারও অজানা নয়। মুকুল যখন দলের মধ্যে দোর্দণ্ড প্রতাপ তখন থেকেই ভাটপাড়ার ‘লড়াকু’ অর্জুন ঘোষিতভাবে মুকুলের বিরোধী অবস্থানে। এবার সর্বভারতীয় রাজনীতিতে অর্জুনের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়ে তাঁর নিজের এলাকাতেই দল তাঁকে অসম্মান করল বলেই মনে করছেন দলের মুকুল ঘনিষ্ঠরা। উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও ঝাড়খণ্ডের সাংগঠনিক দায়িত্ব অর্জুনের হাতে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুকুল ও তাঁর পুত্র শুভ্রাংশুকে চাপে রাখলেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
দলের মধ্যে মুকুল অনুগামীরা অবশ্য এই মত সম্পূর্ণ ভাবে মেনে নিচ্ছেন না। তাঁরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত দলনেত্রীর কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে! তাঁদের মতে দলে এখন এইসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন অভিষেক। লোক দেখানোর জন্য কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে আলোচনা করেন ঠিকই কিন্তু সিদ্ধান্ত একান্তই তাঁর।
তাৎপর্যপুর্ণ ভাবে মুকুলের বিরুদ্ধে নেওয়া এইসব সিদ্ধান্তে মুকুলের লোকসান দেখছেন না তাঁর অনুগামীরা! বরং তাঁরা শোনাচ্ছেন অন্য গল্প। তাঁদের মতে, ‘মুকুল রায়কে অপমান করার তোড়জোড় কর্মীরা দেখছেন। দলের পুরোন কর্মীরা জানেন যে মুকুল রায় তৃণমূলের কী এবং কতটা! তাঁরা দেখছেন। সৎভাবে, ভালোবেসে যাঁরা প্রথম দিন থেকে তৃণমূল করেছেন তাঁদের প্রায় সকলেই দলে বঞ্চিত, উপেক্ষিত।’ একথা ঠিক দলের এই বৃহৎ অংশটির কথা অভিষেকেরও খেয়াল আছে। সেই কারণেই কয়েকদিন আগে তিনি পুরোনদের সম্মানিত করার পরিকল্পনা করেছিলেন। এবার দলের সেই বঞ্চিত অংশকেই ইঙ্গিত করছে মুকুলমহল। তাঁদের দুটি বক্তব্য, প্রথমত, ‘মুকুল রায়ের সাংগঠনিক যোগ্যতা, রাজনৈতিক বিচার -বুদ্ধি অভিষেকের দলে কার্য্যকরীভাবে দু’নম্বর হয়ে ওঠায় বড় বাধা। তাই মুকুলকে সরাতে হবে।’ আর দ্বিতীয়ত, ‘রেলমন্ত্রকের একটি বিতর্কিত টেন্ডার নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, সে সময় তিনি বা দীনেশ ত্রিবেদী রেলমন্ত্রী ছিলেন না। কথাটি মিথ্যে নয়।’
মুকুলের অতি ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, ‘দাদা দলের জন্য অনেক চাপ নিয়েছে, এখন হাল্কা হচ্ছে’।