দেবক বন্দ্যোপাধ্যায়:
১) প্রিয় দা তখন অসুস্থ। সকলের মধ্যে থেকেও নেই। সোমেন দা তখন তৃণমূলে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড.মনমোহন সিংহ এসেছেন কলকাতায়। উঠেছেন রাজভবনে। সন্ধেবেলা দেখা করতে গেলেন সোমেন মিত্র। এ কথা ও কথার পর মনমোহন বললেন প্রিয় তো এখন নেই, তুমি চলে এসো। উত্তরে সেদিন স্মিত হেসে ছিলেন সোমেন দা।
২) ২০০৮ সাল। তখনও প্রিয় দা সভাপতি হন নি। প্রদীপ ভট্টাচার্য ও সুব্রত মুখোপাধ্যায় কার্যকরী সভাপতি হয়ে কাজ চালান। পোষাকী কোনও পদ ছাড়াই মধ্যমণি হয়ে বিধানভবনে সভাপতির ঘরে বসে থাকেন সোমেন দা। সোমেন মিত্র নামটাই প্রদেশ কংগ্রেসে একটি পদ! মধ্যমণি লিখলাম বটে তবে আক্ষরিক অর্থ ধরলে শব্দচয়ন ঠিক হয় নি। সুব্রত মুখোপাধ্যায় কদাচিৎ বিধানভবনে আসতেন। তিনি রাজনীতি করতেন রিপন স্ট্রিটে আইএনটিইউসি-র অফিস থেকে। বিধানভবনে আসতেন প্রদীপ ভট্টাচার্য। সোমেন দা, সভাপতির ফাঁকা আসনের পাশে একটি চেয়ারে বসতেন।
বাতাসে খবর ভেসে উঠল, নতুন সভাপতি হবে। শোনা যেতে লাগল প্রিয়দার নাম। সোমেন দাকে বললাম, প্রিয়দার নাম শুনছি। সোমেন দা বললেন, আমি তো সভাপতি হতে চাইনি। আমি সাংগঠনিক নির্বাচন চেয়েছি।
৩) সাংবাদিক সুমন চট্টোপাধ্যায় তখন একদিন নামক খবরের কাগজটি শুরু করেছেন। আমার দায়িত্ব কংগ্রেস আর তৃণমূল-কংগ্রেসের খবর করা। ২০০৭ সাল। কোনও একটা কারনে সোমেন দাকে ফোন করেছি। কংগ্রেস তৃণমূলের জোট সম্ভব কি না, বা হলে কোন পথে? এইসব প্রসঙ্গ তুলেছি। সোমেন দা বললেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জননেত্রী। জোটের মুখ হবেন তিনি। আর তিনি যদি মনে করেন, আমি সংগঠনটা বিন্দুমাত্র বুঝি, তাহলে সংগঠনটা আমি দেখতে পারি। সোমেন দার ফোন রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করলাম।
‘দিদি, কংগ্রেস এমন বলছে।’
মমতা খুব মজা পেলেন মনে হল। খুব খুশি হলে তিনি তাঁর রাশভারী, রাগী আবরণটা সরিয়ে ফেলে বালিকার মত হয়ে যান। সেদিনও সেভাবেই বললেন, ‘কে বলছে? কংগ্রেসের কে বলছে?’
বললাম, ‘সোমেন দা।’
খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে দিদি বললেন, ‘দেখা যাক। তবে আমার কোনও আপত্তি নেই।’
চিফ রিপোর্টার মানতেই চান না যে সোমেন দা এই কথা বলেছেন। আর দিদিও বলেছেন, যে তাঁর আপত্তি নেই।
যাই হোক, খবর টা ভেতরের পাতায় বেরিয়েছিল। পরের দিন ভেতরের পাতায় খবর দেখে কার্যনির্বাহী সম্পাদক রহিত বসু রেগে আগুন। পরে কুনাল ঘোষ প্রতিদিন কাগজে এই একই বিষয়ে একটি অতি সুন্দর অ্যঙ্কর স্টোরি করেছিলেন।
৪) প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেস তৈরি হয়েছে। সন্দেশের বাক্স হাতে জয়ন্ত ভট্টাচার্য সকলকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন। সোমেন দা সেদিন বলেছিলেন, ইন্দিরা কংগ্রেসই রাজ্যে আসল কংগ্রেসে পরিণত হবে।
৫) সোমেন দা তৃণমূলে। বসেন, শিয়ালদার এ কে পয়েন্টের আপিসে। তৃণমূলের কোনও একটি বিষয়ে প্রশ্ন করলাম, সলাজ হেসে বললেন, দেবক আমি ঠিক তৃণমূল নই!
৬) তৃণমূলে নির্বাসিত জীবন শেষ করে সোমেন দা আবার কংগ্রেসে। রাজ্যে বিজেপি মাথা তুলেছে। সপ্তাহে দু’তিন বার ফোনে কথা হয়। একদিন বললেন, যে অস্ত্রে ঘাসফুল কাটবে সেই অস্ত্রেই আমি শান দেব।
৭) আলম দা সেদিন অতি দ্রুত গাড়ি চালিয়ে সোমেন দা কে বেলভিউ তে না ঢোকাতে পারলে, হয়ত অনেকদিন আগেই অনেক বড় কিছু হয়ে যেতে পারত সোমেন দার জীবনে। সে যাত্রা বেঁচে গেছিলেন। মানুষ কে হিন্দু মুসলিম করে বিচার করতে হয়নি। মানুষ তাঁর কাছে মানুষই ছিল। সম্ভবত সেই জন্য বলতে দ্বিধা করেন নি, মমতা সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িকতা করছে।