ওয়েব ডেস্ক
হাওড়ার বালির নিহত সমাজকর্মী শ্রী তপন দত্তের স্ত্রী তথা মানবাধিকার কর্মী প্রতিমা দত্তকে গ্রেফতারের বিষয় সকলেরই জানা। তবে, যেদিন তাকে গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হয়, সেদিন চোখের সামনে ফুটে ওঠে এক বীভৎস চিত্র। সেই বীভৎস দিনের সাক্ষী ছিলেন প্রতিমা দেবী নিজে, সাক্ষী ছিলেন আরও অনেকেই। সেই বীভৎস দিনের চিত্র সামনে তুলে ধরলেন এক প্রত্যক্ষদর্শী। প্রতিমা দত্তকে গ্রেফতারের পরই হাওড়া আদালতে চত্বরে হাজির হন ‘আক্রান্ত আমরা’-র সদস্যরা। প্রতিক্ষ্যদর্শীর দাবি, প্রতিমাদেবীকে লকআপে বন্দি রাখা হয়েছিল। এমনকী তাঁর বাড়ির লোকেদেরও কথা বলতে দেওয়া হচ্ছিল না। এ তো কিছুই নয়, এদিন চোখের সামনে উঠে আসল পুলিশের আরও এক অমানবিক রূপ। প্রতিমাদেবীর রোজকার ওষুধও তাঁকে খেতে দেওয়া হয়নি। অপরদিকে, তাঁর আইনজীবি শ্রীমতি ভারতী মুৎসুদ্দির সঙ্গেও নাকি দেখা করতে দেওয়া হয়নি। তবে, হাল ছাড়েননি কেউই। সেখানে উপস্থিত সকলেই এরপরেই তিনটি দলে ভাগ হয়ে যায়। একদলতো লকআপের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। আর একদল চলে যায় হাওড়া পুলিশ কমিশনারের কাছে, ডেপুটেশন জমা দিতে। আর একদল অপেক্ষা করতে থাকে আদালতেই। মামলা কখন উঠবে সেই অপেক্ষাতেই বসে থাকেন তাঁরা। বহু অপেক্ষার পর বিচারক আসেন। অন্যান্য মামলা পর অবশেষে আসে প্রতিমা দেবীর মামলা। লকআপ থেকে যেভাবে নিয়ে আসা হয় সেই দৃশ্য এক ‘বীভৎস দৃশ্য’ বলে বর্ণনা করেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাঁদের দাবি, প্রতিমাদেবী নিজেই আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই কথাতে কেউ আমলই দেননি। প্রতিমাদেবীর দু-হাত টেনে হিঁচড়ে শরীরটাকে ছ্যাঁচড়াতে ছ্যাঁচড়াতে নিয়ে আসা হয়। তার সঙ্গে চলতে থাকে প্রকাশ্যে অকথ্য গালাগালি। যে কোনও ভদ্র লোকেদের কাছে সেই শব্দগুলো সহ্য করা সম্ভব নয়। তবুও সহ্য করে থাকতে হয়েছিল। সেই গালাগালির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল প্রতিমা দেবীর আর্তনাদ। আদালত চত্বরে থাকা সকলেই চিৎকার করে উঠেছিলেন। তাতে এতটুকুও আমল দেয়নি পুলিশ। আর তখনই অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রতিমা দেবী। শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট হতে থাকে প্রতিমাদেবীর। চোখ দুটো ধীরে ধীরে লাল হতে থাকে। ওষুধ দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও, সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, ডাক্তার না আসলে ওষুধ দেওয়া যাবে না। যদিও এরপরেও ডাক্তারের দেখা মেলেনি। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে শেষ পর্যন্ত বিচারক তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। নিয়ে যাওয়া হয় হাওড়া জেনারেল হাসপাতালে। অপরদিকে, তখন ‘আক্রান্ত আমরা’-র দুই সক্রিয় কর্মী অম্বিকেশ মহাপাত্র এবং অরুনাভ গঙ্গোপাধ্যায় পুলিশ কমিশনারের দেখা না পেয়ে ডেপুটি কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে সবে বেরিয়ে এসেছেন। এরপর আবার প্রতিমা দেবীর মামলা এজলাসে ওঠে। পুলিশ আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান প্রতিমাদেবীকে নিজের কাস্টডিতে রাখার। তবে, সে চেষ্টা বিফলে যায়। জেল কাস্টডির আদেশ দেন বিচারক। আগামী ১৬তারিখ তাঁকে ফের হাওড়া আদালতে তোলা হবে। আশা করা যায় এখানে তাঁর ওপর ওই অকথ্য অত্যাচার অনেকটাই কম হবে। তবে, যেহেতু প্রতিমাদেবী এদিন আদালতে অসুস্থ হয়ে পড়েন তাই আদালতের আদেশমতো তিনি জেল হেফাজতে থাকাকালীন হাওড়া জেলা হাসপাতালের বন্দিদের জন্য সুনির্দিষ্ট ওয়ার্ডে থাকবেন। তবে সেদিনের চিত্র চোখের সামনে বারবার ফুটে উঠছে প্রত্যক্ষদর্শীদের। চোখ বুজলেই দেখতে পাব প্রতিমাদেবীর মাটিতে হিঁচড়ে আনা শরীর। আর মনে পড়বে পুলিশের অমানবিক রূপ।
লাইক শেয়ার ও মন্তব্য করুন
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন