নীল রায়:
কথায় আছে, কর্তার ইচ্ছায় কর্ম! কিন্তু বসিরহাট লোকসভা এলাকার তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের এখন অবস্থা “নায়িকার ইচ্ছায় কর্ম”! দলের অভ্যন্তরে অভিযোগ উঠছে, বার বার চেয়েও বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী নুসরত জাহানের থেকে প্রচারের জন্য সময় পাচ্ছেন না তাঁরা। উদাহরণস্বরূপ, গত ১৯ মার্চ নায়িকার সময়ের অভাবেই বাতিল করতে হয়েছিল পাঁচটি বিধানসভা এলাকার কর্মী সম্মেলন। সেবার দলীয় নেতৃত্ব জানিয়েছিল, প্রার্থীর সময় বুঝে প্রচার তথা কর্মী সম্মেলনের দিনক্ষণ জানানো হবে। অবশেষে টলিপাড়ার ব্যস্ততম নায়িকা প্রচারের জন্য সময় বের করেছেন। আগামী ২৩ ও ২৪ মার্চ ঘন্টা দেড়েক করে বসিরহাট লোকসভা এলাকার সাতটি বিধানসভায় প্রচার সারবেন নুসরত। ২৩ তারিখ সময় বরাদ্দ হয়েছে হিঙ্গলগঞ্জ, মিনাখা ও হাড়োয়া বিধানসভার জন্য। ২৪ তারিখে বসিরহাট উত্তর ও দক্ষিণে, সঙ্গে সন্দেশখালিতে প্রচারে যাবেন তিনি। এই দুইদিনের প্রচার সারার পর ফের কবে তাঁকে প্রচারে পাওয়া যাবে তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নের মুখে এলাকার তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
প্রসঙ্গত, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্ব বসিরহাটের তৃণমূল নেতাকর্মীদের জানিয়েছে, আবার নায়িকার সময় পেলে প্রচার কর্মসূচী জানিয়ে দেওয়া হবে। যদিও কর্মীদের প্রশ্ন, এত বড় লোকসভা এলাকায় কিভাবে মর্জি মাফিক ঘন্টা দেড়েক প্রচার করে সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছানো যাবে? গত ১২ মার্চ কালীঘাটে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূলের ৪২ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। তারপর থেকেই নুসরত ব্যতীত প্রায় সব প্রার্থী প্রচারের কাজে নেমে পড়েছেন জোরকদমে। দোলের দিনেও আবির ও রং মেখে প্রার্থীরা প্রচার সেরেছেন। দক্ষিণ কলকাতার প্রার্থী মালা রায় থেকে শুরু করে শ্রীরামপুরের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিষ্ণুপুরের শ্যামল সাঁতরাদের হোলি উৎসবের মধ্যে প্রচার সকলের চোখ টেনেছে। টলিপাড়ার আরও এক নায়িকা মিমি চক্রবর্তীও যাদবপুর লোকসভা থেকে ভোটে লড়ছেন তৃণমূলের টিকিটেই। কিন্তু মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও রাজ্যসভার সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তীর সঙ্গে তালমিলিয়ে প্রায় নিয়মিতই প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। নাম ঘোষণার পর টালিগঞ্জ, যাদবপুর, বারুইপুর পশ্চিমে মিমির প্রথমদফার প্রচার সারা হয়ে গিয়েছে। ২৫ তারিখ টালিগঞ্জে, ২৬ তারিখ যাদবপুর ও ২৭ তারিখ সোনারপুর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রচারে অংশ নেবেন মিমি। ২৮ মার্চ ভাঙর বিধানসভার ভোজেরহাটের কর্মী সম্মেলনেও অংশ নেবেন তিনি। সেদিক থেকে প্রচারে অনেকটাই পিছিয়ে নুসরত।
২৩ ও ২৪ তারিখের পর আবার তাঁকে কবে পাওয়া যাবে? নেতাকর্মীদের এমন প্রশ্নের উত্তরে শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছেন, নায়িকার সময় হলেই প্রচার করবেন। তা নিয়ে কারও মাথা না ঘামালেও চলবে। বসিরহাট এলাকার এক সংখ্যালঘু তৃণমূল নেতার কথায়, “দল আমাদের যেভাবে প্রার্থীকে নিয়ে প্রচার করতে বলবে সেভাবেই প্রচার করতে হবে। বাড়তি আবদার করে লাভ নেই।” ইতিমধ্যে এই আসনে বিজেপির সায়ন্তন বসুর নাম ঘোষণা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সীমান্তবর্তী এলাকা বসিরহাট লোকসভায় বিজেপির প্রভাব যথেষ্ট। বসিরহাট দক্ষিণ এলাকা থেকে একসময় বিধায়ক ছিলেন বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য। রাজ্য রাজনীতিতে কংগ্রেস ও বামেরা ক্রমশ প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হওয়ায় বিরোধী হিসেবে উঠে এসেছে গেরুয়া শিবির। তাই নায়িকার এহেন প্রচারবিমুখতায় চিন্তিত বসিরহাট তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।
Channel Hindustan Channel Hindustan is Bengal’s popular online news portal which offers the latest news