Breaking News
Home / TRENDING / কৃষ্ণবিরহে গোপিনীর অবস্থা হত শ্রীচৈতন্যের

কৃষ্ণবিরহে গোপিনীর অবস্থা হত শ্রীচৈতন্যের

 

কমলেন্দু সরকার :

ভক্তদের সঙ্গে মহাপ্রভুর নরেন্দ্র সরোবরের ধারেই দেখা হল। সকলেই তাঁকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করছেন। মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য প্রত্যেকের সঙ্গেই আলিঙ্গন করছিলেন। সকলের চোখেই আনন্দাশ্রু। সরবোরে চলছে জলকেলি। সেইসঙ্গে সমান তালে চলছে ভক্তদের সংকীর্তন। মহাপ্রভুও ভক্তদের সঙ্গে জলখেলা-ই মেতেছেন।
জলখেলা শেষ হলে মহাপ্রভু ভক্তসঙ্গে চললেন জগন্নাথদেবের মন্দিরের দিকে। জগন্নাথ দর্শন করে মহাপ্রভু মহাপ্রসাদ খেলেন। ভক্তরাও ছিলেন। এরপরে শুরু কৃষ্ণকথা।
পরদিন শেষরাতে ভক্তদের নিয়ে এলেন জগন্নাথ মন্দিরে। দেখলেন জগন্নাথের শশয্যাতোলা। তারপর দলে দলে ভাগ হয়ে কীর্তন শুরু হল। নামগান আর মন্দির প্রদিক্ষণ চলে একইসঙ্গে। শ্রীঅদ্বৈতাচার্য, শ্রীনিত্যানন্দ, অচ্যুতানন্দ, শ্রীবাস পণ্ডিত, বক্রেশ্বর, সত্যরাজ খান, নরহরি দাস এই সাতজন সাতটি দলে ভাগ কীর্তনের সঙ্গে নাচতেও লাগলেন। মহাপ্রভু একবার এই দলে, আর একবার ওই দলে, এভাবে নাচতে লাগলেন সকলেরই। তিনি তো সকলেরই মহাপ্রভু। সকলেই তাঁর ভক্ত।
সংকীর্তনের শব্দে আকাশ-বাতাস মুখরিত হতে লাগল! এক সাতজনের সাতটি দল গোল হয়ে নাচতে লাগল আর মহাপ্রভু মাঝে একা নাচতে লাগলেন। সে এক অপূর্ব দৃশ্য জগন্নাথ মন্দিরে! মানুষজন সব প্রেমানন্দে মজে আছেন চলছে তুমুল হরিধ্বনি। চারিদিকে শুধুই আনন্দ। নামগান করতে করতে হঠাৎই মহাপ্রভু মূর্ছা গেলেন। সকলকে অবাক করে দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন নিজেই! আবার বিভোর হলেন কীর্তনে। নীলাচলবাসীরা এসে ভিড় জমালেন সেখানে। রাজা, পাত্রমিত্র-সহ রাজপরিবারের মহিলারও দেখছেন প্রাসাদ থেকে।
শ্রীচৈতন্যর শরীর ঘেম গেছে। তাঁর শরীর থেকে থেকে কেঁপে উঠছে! তিনি আর নিজের মধ্যে নেই। অন্য কোনও জগতে চলে গেছেন তিনি। বেলা তিন প্রহর গড়িয়ে গেছে তবুও বিরাম নেই। নাওয়া-খাওয়াও নেই। যাঁরা দেখছেন তাঁরাও ভুলে গেছেন বাড়ি ফেরার কথা, খাওয়ার কথা! সকলেই আনন্দ আবেগে ভেসে গেছেন।
সেইসময় নিত্যানন্দ কীর্তন বন্ধ করে দিলেন। তাঁকে দেখে অন্যেরাও এক এক করে বন্ধ করলেন নামগান। মহাপ্রভুরও বাহ্যজ্ঞান ফিরতে শুরু করছে ক্রমশ। ভক্তেরাও ক্লান্ত। শ্রীচৈতন্যদেব সকলকে সঙ্গে গেলেন সমুদ্রস্নানে। স্নান শেষ হলে সবাই মহাপ্রসাদ খেলেন। বিশ্রামের জন্য সকলেই বিদায় নিলেন মহাপ্রভুর কাছ থেকে। তিনি শুয়ে পড়লেন গম্ভীরার দরজায়। গোবিন্দ প্রতিদিনের মতো মহাপ্রভুর পদসেবায় ব্যস্ত হয়ে গেলেন।
শ্রীচৈতন্যদেব পুরো দরজা জুড়ে শুয়ে আছেন। তাঁর সারা শরীর টিপে দিতে লাগলেন গোবিন্দ। মহাপ্রভু ঘুমিয়েও পড়লেন। আজ খুব পরিশ্রম হয়েছে তাঁর। এমন ভাবেই তো মহাপ্রভু অনেকরকম লীলা করে থাকেন। ভক্তদের নিয়ে মহাপ্রভু ধোয়ামোছা করলেন গুণ্ডিচাবাড়ি। কীর্তনও হল। বনভোজন হল। রথের সামনে নাচ এবং নামগান হল। রথের সামনে মহাপ্রভুর নাচ সে এক স্বর্গীয় দৃশ্য! শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু জগন্নাথকে দেখতেন ব্রজনন্দনরূপেই। তিনি মুরলীবদন শ্রীকৃষ্ণকেই দখতে পেতেন। তাই তো জগন্নাথদেবের সামনে মহাপ্রভুর অবস্থা হত ঠিক কৃষ্ণবিরহে গোপীদের মতো।

Spread the love

Check Also

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

শুধুমাত্র শুদ্ধিকরন আর বাংলাদেশ নয়, মমতার যে কথায় কান দিল না মেইনস্ট্রিম মিডিয়া

“ভর্সা যেন না পায় কোনও দাঙ্গামুখো হতচ্ছাড়া, সবাই মিলে বেঁচে থাকার ভর্সা তাদের করুক তাড়া’ …

কোন সাহসে দলের প্রধান স্লোগান কে চ্যালেঞ্জ করলেন শুভেন্দু? কপালে ভাঁজ বিজেপির

দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় উফ্! শুভেন্দুর বক্তৃতা শুনে সেই যে গায়ে কাঁটা দিয়েছে সেই কাঁটা আর যায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *