চ্যানেল হিন্দুস্তান ব্যুরো।
করোনা ভাইরাসের (Coronavirus) সংক্রমন বেড়ে চলায় আবারও এক সপ্তাহের জন্য কলকাতা সহ জেলার বাছাই করা কন্টেনমেন্ট জোনে লকডাউন ঘোষনা করেছে রাজ্য সরকার। সেই লকডাউন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে করা হয়েছে বলে অভিযোগ করলেন বিজেপি (BJP) নেতা রাহুল সিংহ (Rahul Sinha)। রবিবার উত্তরপাড়ায় এক দলীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে রাহুল সিংহ বলেন, “লকডাউনটাও যদি ধর্মের ভিত্তিতে হয় তাহলে তো চিন্তার বিষয়।কলকাতা এবং অন্য জায়গায় যেসব এলাকা কনটেনমেন্ট জোন হওয়ার কথা সেই সব এলাকা অদ্ভুত ভাবে কনটেনমেন্ট থেকে বাদ রাখা হয়েছে। সেখানে লকডাউন নেই।” তাঁর আরও অভিযোগ, “সরকার যদি প্রতিটি ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি নিয়ে কাজ করে তাহলে পশ্চিমবঙ্গের বিপদ। এবং সেই বিপদের দিকেই আমরা এগোচ্ছি। সারা দেশে করোনা বাড়ছে পশ্চিমবাংলাতেও বাড়ছে।” প্রসঙ্গত, তৃণমূল কংগ্রেস ও রাজ্য সরকার ধারাবাহিকভাবে বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে আক্রমণ শানায়। কিন্তু কনটেইনমেন্ট জোন ইস্যুতে পাল্টা এই বিজেপি নেতা তৃণমুলকেই ‘সাম্প্রদায়িকতা’র হাতিয়ারে ঘায়েল করার চেষ্টা করলেন।
সরকারের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের মোকাবিলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এই বিজেপি নেতা। রাহুল সিংহ বলেন, “বাংলায় র্যান্ডম টেস্ট হচ্ছে না। যে কারনে বহু সংখ্যক করোনা ভাইরাসের রোগী হয়তো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যাদের উপসর্গ নেই, তাদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা।” তিনি আরও বলেন, “গতকাল দেখা গেলো পনেরো ঘন্টা চারটি হাসপতাল ঘুরেও ছেলেকে ভর্তি করতে পারেন নি বাবা। তাতেই মৃত্যু হল ওই কিশোরের, এটাই পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবস্থা।”
কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police) ও কলকাতা পুর নিগমের (Kolkata Municipal Corporation) আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় কনটেইনমেন্ট জোনগুলিতে লকডাউন করার। নতুন ওই তিনটি জায়গা ছাড়াও কলকাতা পুরসভার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের মতিলাল বসাক লেন, ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের আলিপুর রোড, জাজেস কোর্ট, ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের শরৎ বোস রোড, চক্রবেড়িয়া রোড, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁকুড়গাছি, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের আরিফ রোড, অধর চন্দ্র দাস লেন, ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বলোক, ৯০ নম্বর ওয়ার্ডের শরৎ ব্যানার্জী রোড, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের হরিপাল লেন, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের জওহরলাল দত্ত লেন (দত্তবাগান), ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডেও কড়া লকডাউন জারি রয়েছে। এছাড়াও কনটেনমেন্ট জোনের তালিকায় রয়েছে ৯৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়গড়, ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের ডঃ জিএস বোস রোড, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের রাজা রামমোহন সরণি, ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের সম্মিলনী পার্ক, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের উল্টোডাঙা মেন রোড, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের ত্রাণকৃষ্ণ নস্কর লেন ক্রসিং চালপট্টি রোড, ৬৭ নম্বর ওয়ার্ড, ১২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বৈদ্যপাড়া হাইস্কুল থেকে ৪৬/১ ভূবনমোহন রায় রোড, ১২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৫১ প্রগতি পল্লি থেকে ২৪৫ সি এমজি রোড, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বলরাম দে স্ট্রিট, ৬০ নম্বর ওয়ার্ডের সুন্দরীমোহন অ্যাভিনিউ ক্রসিং থেকে বৈদ্যপীঠ স্কুলও। শনিবার সকাল থেকে এই সমস্ত জায়গায় কড়াকড়ি করেছে পুলিশ প্রশাসন। গড়িয়াহাটের গড়চা রোড, ভবানীপুরের বকুলবাগান, মানিকতলা মেন রোডের একটি আবাসন এবং রামকৃষ্ণ সমাধি রোডের কিছুটা অংশ। কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের কনটেনমেন্ট জোনে গত বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর লকডাউন জারি করেছে রাজ্য সরকার। প্রথমে কলকাতায় ২৫ টি কনটেনমেন্ট জোন চিহ্নিত করা হয়েছিল। পরিস্থিতি বুঝে শুক্রবার রাতে এক বৈঠকে বাড়ানো হয় শহরের কনটেনমেন্ট জোনের (Containment Zone) সংখ্যা। বিজেপি নেতা রাহুল সিংহের অভিযোগ, এই সমস্ত এলাকায় লকডাউন করা হয়েছে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে। মূলত বাদ রাখা হয়েছে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলি।