দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় :
উত্তর কলকাতার রসগোল্লা না পেলেও, দিদির হাতে সাজা ছাঁচিপান পেতেও পারেন কুনাল!
এক্স হ্যান্ডেল দিয়ে সিচুয়েসন হ্যান্ডেল করার দ্বিতীয় দিনের গোধূলি বেলায় এমন খবর পাওয়া গেল আদি গঙ্গার তীরে…
প্রেক্ষাপট :
কল্পনানুসারে, কুনাল ঘোষের স্নায়ুর লড়াই সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কলকাতা উত্তরের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০০৯ থেকে একটানা কলকাতা উত্তরের সাংসদ। তার ঠিক আগেই কংগ্রেসের বিধায়ক। সিঙ্গুরে পরিবর্তনের সবুজ সংকেত আঁচ করে অভিজ্ঞ সোমেন মিত্র যখন মমতার দিকে হাত বাড়ালেন, সুদীপ তখনও সংযত ছিলেন। তড়িঘড়ি কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহন করেননি। বলা ভালো, পরিবর্তনের লড়াইয়ে মমতার পাশে থাকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত সোমেন মিত্র যখন নিয়ে ছিলেন তখনও সিঙ্গুর সংকেত দিলেও সিঙ্গুর ফল টক হবে না মিষ্টি, তা স্পষ্ট করে বোঝা যায়নি! তবু সোমেন পথে নেমে পড়েছিলেন। সুদীপ কিন্তু সেই পথে হাঁটেননি। অপেক্ষা করেছিলেন। শেষপর্যন্ত কলকাতা উত্তর কনফার্ম হবার পরেই তিনি তৃণমূলে ফিরে আসেন। অন্ততঃ, সেই সময়ের রাজনৈতিক মহলে এমনটাই ছিল খবর।
বর্তমান:
রোজভ্যালি চিটফান্ড কাণ্ডে আটক হবার দিন সকালেও সুদীপ দৃশ্যতঃ ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। অনেকে বলেন, বিজেপির সঙ্গে তাঁর পুরনো সুসম্পর্ক, সম্ভবত এ হেন আত্মবিশ্বাসের কারন ছিল। যদিও পুরনো বিজেপির সঙ্গে সুসম্পর্ক, নতুন মোদি-শাহের বিজেপিতে সে যাত্রা কোনও কাজে লাগেনি। সুদীপের ভুবনেশ্বর যাত্রা রুখতে পারেনি কেউ।
ভূবনেশ্বর থেকে ফিরে এবং চূল ও দাড়িতে কলপ করা ছেড়ে দিয়ে, শ্বেতশুভ্র সুদীপ নিজের অভিজ্ঞতায় ও বিচক্ষনতায় আবার তৃণমূলে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। অনেকের মতে বিজেপির সঙ্গে ট্র্যাক টু ডিপ্লোমেসিতে ‘সুদীপ দা’ এখনও মমতার ভরসার পাত্র।
কুনাল :
কল্পনানুসারে, এ হেন সুদীপের প্রতিপক্ষ কুনাল। কোন কুনাল? যিনি কর্মজীবনের নাগোরদোলায় চেপে একবার সাফল্যের শীর্ষে উঠেছেন, তারপর আত্মহত্যার প্রাক মুহুর্ত পর্যন্ত পতন হয়েছে তাঁর। তারপর আবার প্রবল ভাবে উঠে দাঁড়িয়েছেন।
যিনি বেসিক্যালি সাংবাদিক কিন্তু দ্বৈত পরিচয় পছন্দ করেন। যেমন, একদা সাংসদ-সাংবাদিক আর এই মুহুর্তে সাংবাদিক ও সমাজকর্মী।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিলো দ্য বেল্ট আক্রমণের নিরিখে যাঁর অবস্থান শুভেন্দুর পরেই। সুদীপ্ত সেন ও গৌতম কুণ্ডুর সঙ্গে মমতার ডেলো-বৈঠক হয়েছিল বলে তিনি অন-ক্যামেরা দাবি করেন। মমতার জন্য বামফ্রন্টের আয়ু দশ বছর বৃদ্ধি পেয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ২০১৭ সালে যখন এই পর্যায় চলছে তখনও ভাবতে পারা যায়নি ২০২১ এর ভোটে তিনিই তৃণমূলের প্রধান কয়েকটি মুখের মধ্যে একটি হয়ে উঠবেন। ওই নির্বাচনে, শুধু মূখ নয়, সম্ভবত তিনি অন্যতম মস্তিষ্কও হয়ে উঠেছিলেন। একুশ থেকে শুরু করে তৃণমূল কুনালময় হয়ে ওঠে। এত কিছুর পরেও তিনি সারদা-কলঙ্ক মুছে ফেলতে পারেননি। আইনের চোখে তিনি সাফসুতরা হয়ে গেলেও জনমানসে তাঁর ছবি পরিচ্ছন্ন হয়নি। তাঁর মুখপাত্রের ভূমিকাও প্রশ্নাতীত হয়নি। সময় সময় এমন কিছু মন্তব্য তিনি করে বসেছেন, যাতে মনে হয়েছে, তিনি দলের নন, দলের একটি অংশের মুখপাত্র। তবু বলতেই হবে, ন্যারেটিভের লড়াইতে তিনি বিজেপির পাল্টা ন্যারেটিভ দিতে সময় নষ্ট করেননি। সাংবাদিকতার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও কুশলতা, এই কাজে তাঁকে সাহায্য করেছে বলেই মনে হয়।
এতদিন পরে তিনি যদি আবার সংসদীয় রাজনীতিতে ফিরতে চান, চাইতেই পারেন। রাজ্যসভার তালিকায় তাঁর ঠাঁই হয়নি। লোকসভাতে টিকিট আশা করা তাঁর দিক থেকে অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু ওই যে বললাম, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সুচারু রাজনীতিক। বেড়ে খেলেন না শুধু সময় মতো বল বাড়িয়ে দেন!
এমতাবস্থায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কুনালকে বাগবাজারের রসগোল্লা খাওয়াতে পারবেন বলে মনে হয় না! তবে নিজের হাতে সাজা একটি ছাঁচি পান তাঁর জন্য রাখা থাকলেও থাকতে পারে!