Breaking News
Home / TRENDING / ঝড়ের ঠিকানা – পর্ব ৫

ঝড়ের ঠিকানা – পর্ব ৫

মমতা বলতেন, “রাস্তাই আমাদের রাস্তা দেখাবে।”

সঞ্জয় সিংহ  :

(জনপ্রিয় এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক  সঞ্জয় সিংহের স্মৃতিসরণিতে অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ) : 

অজিত পাঁজা, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মতো ডাকসাইটে নেতাদের দল ছেড়ে যাওয়া। তার সঙ্গে এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসা! ২০০৩-২০০৪ সাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিশেহারা করে দিয়েছিল। ২০০৪ সালের লোকসভা ভোটে দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্র থেকে তিনি জিতলেন। একা। কালীঘাটের বাড়িতে তখনও ভিড় হয় ঠিকই, কিন্তু আগের মতো নয়। ধর্মতলায় সভা ডাকেন তিনি। লোকজন জমে। তবে খুব বেশি হলে ৫০০। মমতা অবশ্য তাঁর হতাশা, স্বপ্ন সফল না-হওয়ার আপশোস বুঝতে দেয় না। শহর কলকাতা তো বটেই, জেলায় জেলায় ঘুরে তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু রাখেন।

সেইসময় মমতা এনডিএ ছেড়েছিলেন রেল বিভাজনের প্রতিবাদে। তার আগে দফতর-বিহীন মন্ত্রীও ছিলেন। কিন্তু ২০০৪ সালের ভোটে এনডিএ-র যেমন ভরাডুবি হয়, তেমনই হাঁড়ির হাল হয় তৃণমূলের। মমতা অবশ্য বলতেন, ‘কংগ্রেস-সিপিএম গট আপ গেম’, ‘যৌথ ষড়যন্ত্রে তৃণমূল লোকসভায় একা।’
১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন মমতা। দল গঠনের প্রায় দেড় মাসের মধ্যে লোকসভা ভোটের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়দের। সে বার ৭ জন সাংসদ নিয়ে মমতা লোকসভায় ঢুকেছিলেন। সে দিন বাইরে থেকে অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকারকে সমর্থন জানিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু অটলবিহারীর সেই সরকার বেশিদিন টেকেনি। ১৯৯৯তে আবার ভোট এবং এবার ৮ জন সাংসদ নিয়ে মমতার লোকসভায় প্রবেশ ঘটল। এমনকী, এনডিএ সরকারের রেলমন্ত্রী হলেন মমতা। কিন্তু মাত্র দু’বছরের মধ্যে তহলকা কেলেঙ্কারীর ঘটনা নিয়ে সেই সরকার ছেড়েছিলেন মমতারা।
ফলে তৃণমূলের এনডিএ ছাড়া এবং ঢোকা নতুন নয়। এর মধ্যে ২০০১ সালে রাজ্যে বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হল তৃণমূলের। কিন্তু সেই ভোটে ‘পরিবর্তন’ হল না। পারস্পরিক দোষারোপ, ষড়যন্ত্রের অভিযোগ, পালটা অভিযোগ মমতা এবং তাঁর দল ক্রমশ একা হতে শুরু করল। ২০০৪ সালের পর পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছল, বিশেষ করে রেল বিভাজনের বিষয়কে কেন্দ্র করে এনডিএ-র সঙ্গে মমতার এক ‘মধুর’ সম্পর্ক তৈরি হল। অন্যদিকে কংগ্রেসের ছায়াও মাড়ান না মমতা।
বছর দু’য়েকের মধ্যেই রাজ্যে বিধানসভা ভোট হল। ২০০৬ সালের সেই ভোটে তৃণমূল ছত্রাখান। সাকুল্যে ৩০টি আসনে জয়ী। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যদের দাপট অপরিসীম। মমতা কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই শুরু করেছেন। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, সুব্রত বক্সি, মুকুল রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্র, সোনালি গুহ, অরূপ বিশ্বাস, শোভন চট্টোপাধ্যায়দের নিয়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাস্তায় নামছেন। মমতা তখন একটাই কথা বলতেন,“রাস্তাই আমাদের রাস্তা দেখাবে।” প্রচণ্ড গরমে সভা করছেন ধর্মতলায়। মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন তৃণমূলনেত্রী। তবুও নাছোড় তিনি, আন্দোলন, রাস্তায় নেমে অন্যায়ের প্রতিবাদে সরব।
এই বিপর্যস্ত সময়ে একবার ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের আয়োজন করেছে তৃণমূল। সেইসময় রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনে মমতা শুধু তৃণমূলের সাংসদ। সেই সমাবেশে মমতা স্লোগান বা প্রচারের ‘ক্যাচ লাইন’ ছিল— একের সঙ্গে ৪১ এর লড়াই, চল এবার ঘুরে দাঁড়াই। সে-বারই ময়দানে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অমিতাভ চক্রবর্তী ২১ জুলাইয়ের পালটা সমাবেশের আয়োজন করেছেন। সেই সভার প্রধান বক্তা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। মমতার সভার ‘ক্যাচ লাইন’কে কটাক্ষ করে প্রিয়রঞ্জনের পালটা বক্তব্য, “নয় যখন একা হয়, মায়ের কথা মনে হয়।” মমতাদের এবার মায়ের কথা, মানে কংগ্রেসের কথা ভাবতে হবে। কংগ্রেসের হল মা। আগামী দিনে তৃণমূলকে (কংগ্রেস) মূল স্রোতে ফিরতেই হবে।
প্রিয়রঞ্জনবাবুর সেই বক্তব্যকে মমতা পাত্তা দেননি। কারণ, হুগলির সিঙ্গুরে তখন ‘জমি বাঁচাও’ আন্দোলনের ফুলকি সবে জ্বলেছে। বিচক্ষণ রাজনৈতিক নেত্রীর মতোই মমতার নজরও ঘুরেছে সিঙ্গুরের দিকে। তিনি বুঝেছেন, তাঁদের একাকিত্বের দিন ঘুচতে চলেছে। মমতা আবার শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে আরও বড় লড়াই শুরুর জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।

Spread the love

Check Also

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

শুধুমাত্র শুদ্ধিকরন আর বাংলাদেশ নয়, মমতার যে কথায় কান দিল না মেইনস্ট্রিম মিডিয়া

“ভর্সা যেন না পায় কোনও দাঙ্গামুখো হতচ্ছাড়া, সবাই মিলে বেঁচে থাকার ভর্সা তাদের করুক তাড়া’ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *