Breaking News
Home / TRENDING / ঝড়ের ঠিকানা : পর্ব – ৪

ঝড়ের ঠিকানা : পর্ব – ৪

মমতা বলেছিলেন,“আমি  সাইডে থাকতে ভালবাসি”

সঞ্জয় সিংহ    :

( জনপ্রিয় এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক  সঞ্জয় সিংহের স্মৃতিসরণিতে অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় )

২০০৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দ্বৈরথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হাতিয়ার’ ছিলেন তৎকালীন কলকাতার মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কিন্তু রাজনীতির কী খেল, সেই সুব্রতবাবুর সঙ্গেই সম্পর্ক ‘তিক্ত’ হয়ে উঠল সেই লোকসভা ভোটের পরেই। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, কোনও অনুষ্ঠানে মেয়র থাকলে তৃণমূলনেত্রী তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলতেন। প্রকাশ্যেই তাঁদের এই দূরত্ব রক্ষার ছবি দেখা গিয়েছিল।

১৭ অক্টোবর ২০০৪। রানিকুঠিতে কলকাতা পুরসভার জল প্রকল্পের উদ্বোধন ছিল। সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মঞ্চে মেয়রের পাশে তো বসলেনই না মমতা। মঞ্চের এককোণে প্রায় উইংসের ধারে বসে বেশিরভাগ সময়েই কানে মোবাইল ধরে মমতা কথা বলছিলেন। মা দুর্গার ছবি আঁকছিলেন। তৎকালীন মেয়র পারিষদ শোভন চট্টোপাধ্যায়, স্থানীয় বোরো কমিটির চেয়ারম্যান অরূপ বিশ্বাস বার বার তাঁকে সামনে এসে বসতে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু মমতা অনড়। কেন তিনি মঞ্চের এককোণে বসেছিলেন? পরে জিজ্ঞাসা করায় তৃণমূলনেত্রীর জবাব ছিল, “আমি সাইডে থাকতে ভালবাসি।”

রানিকুঠির অনুষ্ঠানে সুব্রতবাবুর সঙ্গে কেন তিনি দূরত্ব রেখেছিলেন তার কারণও ছিল। এই অনুষ্ঠানের ঠিক আগেই পুনর্নির্মিত স্টার থিয়েটারে তখনকার মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সুব্রতবাবু। আর সেই উদ্বোধন অনুষ্ঠান ছিল ১৩ অক্টোবর। সেইদিনই দলীয় মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’র শারদ সংকলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আয়োজন করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী। একে দলীয় অনুষ্ঠানের দিনই পুরসভা নবনির্মিত স্টারের উদ্বোধনের আয়োজন করেছে এবং তা করেছেন মেয়র, তার ওপর ওই অনুষ্ঠানে ডাকা হয়েছে মমতার ‘না-পসন্দ’ বুদ্ধবাবুকে।

অবশ্য মমতা-সুব্রত এই মন কষাকষির শুরু হয়েছিল কিছুদিন আগেই। ২০০০ সালের পুরভোটে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার সময় দলনেত্রী ঘোষণা করেছিলেন জলকর বসানো চলবে না। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে মেয়র হিসেবে সুব্রতবাবু জলকর বসানোর কথা ঘোষণা করেন। অত্যন্ত চটে যান মমতা। দু’জনের সম্পর্কের অবনতির শুরু এই জলকর নিয়ে। তারপর স্টার থিয়েটার পুনর্নির্মান এবং বামফ্রন্ট সরকার, বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে সুব্রতবাবুর ‘বোঝাপড়ার সম্পর্ক’ গড়ে ওঠায় মমতা অত্যন্ত বিরক্ত ছিলেন। বুদ্ধবাবুর সঙ্গে তাঁর ‘হৃদ্যতা’ নিয়ে সুব্রতবাবুকে সেইসময় প্রশ্ন করলে তিনি বলতেন, “আরে, আমি মেয়র, উনি মুখ্যমন্ত্রী। আমাকে তো কাজ করার জন্য একটা ‘ওয়ার্কিং রিলেশন’ রাখতেই হবে।”

সুব্রতবাবুর কথা যুক্তিসম্মত। কিন্তু সেইসময় তৃণমূলের অনেক নেতাই দলনেত্রীর কানভারী করতেন। অনেকেই বলতেন, “দিদি বুদ্ধবাবুকে অপছন্দ করেন। এটা মেনেও কেন সুব্রতদা সমঝে চলেন না!”

পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ সুব্রতবাবুও বুঝতে পারছিলেন জল কোন দিকে গড়াচ্ছে। ২০০৫-এর পুরভোটের ঠিক আগে, ২৬ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় ৯ বিধায়ক ১১ কাউন্সিলারকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল ছেড়ে সুব্রতবাবু নতুন সংগঠন গড়লেন ‘পশ্চিমবঙ্গ উন্নয়ন কংগ্রেস মঞ্চ’। সেবার পুরভোটে ‘ঘড়ি’ চিহ্ন নিয়ে সুব্রতবাবু ভোটে লড়েছিলেন। জোট গড়ে ছিলেন কংগ্রেসের সঙ্গে।

ভোটের আগে তৃণমূলে এই ভাঙনের ফলে সুবিধে হয়েছিল বামফ্রন্টের। তৃণমূলকে হটিয়ে পুরসভার দখল নিয়েছিলেন বিকাশ ভট্টাচার্যরা।

সুব্রতবাবুরা আবার তৃণমূলে ফিরেছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ওই পুরভোটের এক বছর বাদে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন। মমতার জনপ্রিয়তা আবার তুঙ্গে উঠেছিল। সেই জনপ্রিয়তার আকর্ষণে সুব্রত, সুদীপের মতো ‘দলছুট’রা আবার ফিরেছিলেন মমতা-ছাতার আশ্রয়েই।

কীসের জোরে, কোন কৌশলে প্রায় একা সাংসদ হয়ে মমতা আবার রাজ্য-রাজনীতিতে শীর্ষে এসে গেলেন। সেই কাহিনি আগামিবার।

Spread the love

Check Also

চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক

ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *