মধুমন্তী
খোরজুনা থেকে কামদুনি, দিল্লি থেকে পার্কস্ট্রিট, পুরুলিয়া থেকে সন্দেশখালি। নামগুলো আমাদের অচেনা নয়, তবে ঘটনাস্থলগুলো আমাদের কাছে যে যে কারণে খুব বেশি করে পরিচিত হয়ে উঠেছে তা হল ধর্ষণ! শব্দটা আর খুব বেশি আমাদের অবাক করে না। কারণ প্রতিদিন কোথাও-না-কোথাও ঘটে যাচ্ছে শয়ে শয়ে ধর্ষণ। তবে সবটা খবরের পাতায় উঠে আসার যোগ্যতা পায়না! সেগুলোই পায় যেগুলোতে রগরগে হয়ে ওঠে নৃশংসতা। যেমন ধরুন, গণধর্ষণ করার পর তাঁর শরীরে সজোরে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় আস্ত একটা রড বা ভাঙা কাঁচের বোতল, বা ধরুন যৌনাঙ্গ কেটে ফালা ফালা করা হয় ব্লেড দিয়ে বা একটা তিন বছরের ছোট্ট শিশুর শরীরের বিভিন্ন প্রান্তে নির্দ্বিধায় ঢুকিয়ে দেওয়া যায় সাত-সাতটা সুচ।
“‘পার্সোন্যালিটি ডিসঅর্ডার’ যার মধ্যে থাকে ‘ক্লাসটার বি’। এই ক্লাসটার বি-এর আবার দুটো ভাগ অ্যান্টি সোশ্যাল, বর্ডার লাইন। এই দুই গোত্রেই পড়ে এই ধরনের নৃশংস ধর্ষকরা”, বলছেন মনরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এও জানান, “এই ধরনের মানসিক স্থিতি তৈরি হয় ছোট থেকেই। তবে ছোটবেলায় এতটা হিংস্রতা না থাকলেও তার লক্ষণ নজরে আসে। যেমন, পেনসিল দিয়ে বন্ধুকে খুঁচিয়ে দেওয়া, স্কুলে শিক্ষকের কথা না শোনা, যখনতখন ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাওয়া। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে রোগের প্রকোপ। তবে বেশিটাই পারপার্শিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে হয়। শিক্ষাগত যোগ্যতাও এখানে গুরুত্ব রাখে, শিক্ষার মান যেখানে ভাল সেইসব জায়গায় এই ধরনের ঘটনার হার অনেক কম নজরে আসে। এই রোগে আক্রান্তদের স্বভাবও অত্যন্ত শান্ত, ভদ্র, বিনয়ী হয়। যাদের দেখলে সহজে বোঝা দায় আসলে তাঁদের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে এমন এক হিংস্র পশু।”
এরও পরে আর যা থাকে তা ওই ধর্ষকদের ভাবলেশহীনভাবে বেঁচে থাকা। যেন কিছুই হয়নি অতীতে।
সাম্প্রতিক অতীতের ঘটনাই যদি ধরি, পুরুলিয়ায় শিশুর শরীরে সুচ ঢুকিয়ে যৌন হেনস্থার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে সনাতন ঠাকুরকে। তবে গতকাল সে নির্বিকার চিত্তে রেলের বার্থে শুয়ে দিব্যি সুরেলা কণ্ঠে গান গাইতে গাইতে চলছে। মাঝে মাঝে চোখ খুলে মেপে নিচ্ছে আশপাশের মানুষগুলোকে।
এ প্রসঙ্গে কেদারবাবু বলেন, “এই ধরনের মানুষদের কোনওরকম পাপবোধ কাজ করে না। সাধারনত সুস্থ মানুষ কাউকে আঘাত করলে পরে খারাপলাগা কাজ করে। এদের ক্ষেত্রে সেটা থাকে না। এবং এদের মানসিক কোনও স্থিরতা না থাকার দরুন এদের ব্যবহারেও অনেক অসঙ্গতি চোখে পড়ে। বহুক্ষেত্রে এরা আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়।”
আরেক মনরোগ বিশেষজ্ঞ ড. বিদিতা ভট্টাচার্য জানান, “কখনও কোনও পুঞ্জীভূত রাগ থেকে এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। সেক্ষেত্রে একটা ছোট শিশুকে বেছে নেওয়া ধর্ষকদের অনেক বেশি নিরাপদ বলে মনে হয়। কারণ শিশুদের ভয় দেখিয়ে চুপ করানো সহজ।”
তবে কী এই নৃশংসতা বা মানসিক বিকার চিরকালীন! ডাঃ কেদাররঞ্জন জানান, “১৮ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদের সারিয়ে তোলা সম্ভব। প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে গেলে তা বেশ কঠিন। কারণ, তাদের অবাধ্যতার মাত্রা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে শুরু করে। যার ফলে তারা কথা শুনতে চায়না। তবে এক্ষেত্রে পরিবারকেও যথেষ্ট সচেতন হতে হয়।”
এত বিচার বিবেচনার পরও আগামিকাল খবরের পাতা খুললেই নজরে আসবে একটা না একটা ধর্ষণ। আবার স্বভাবিক ছন্দে ফিরে যাবে জীবন! তবে কী নির্ভয়াদের জন্য পড়ে থাকবে চিরন্তন অন্ধকার!
লাইক শেয়ার ও মন্তব্য করুন
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন