Breaking News
Home / TRENDING / দার্জিলিং – সঙ্কট সকলের   

দার্জিলিং – সঙ্কট সকলের   

চিরজিত পাল :

৮ জুন ২০১৭ : প্রায় ৪৪ বছর পর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ক্যাবিনেট মিটিং হল দার্জিলিঙের রাজভবনে। কিছুদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন সমস্ত স্কুলে বাধ্যতামূলকভাবে বাংলা পড়াতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্পেশাল অডিট টিমের দার্জিলিং পৌঁছনোর কথা পরের দিন, অর্থাৎ ৯ জুন। তারা জিটিএ-র হিসেবপত্র পরীক্ষা করবেন। জিটিএ-র মেয়াদ শেষ হচ্ছে আর কিছুদিন পরেই, অর্থাৎ সামনেই নির্বাচন। সম্প্রতি পুরসভার ভোট সম্পন্ন হয়েছে। মিরিক পুরসভা তৃণমূল জিতেছে এবং মনোবলও বাড়িয়ে নিয়েছে।

স্কুলে বাংলা পড়ানোর বিষয়টা নিয়ে তারা কিছুদিন ধরেই প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিল। অডিট-এ কি বেরিয়ে পড়তে পারে সেটা তারা ভালই জানে। মিরিকে পরাজয়ের পর রাজনৈতিক জমি কিছুটা হলেও হারিয়ে তৃণমূলের  যাওয়ার একটা ভয় মোর্চার মধ্যে ঢুকেছে। প্রশাসন মনে করেছিল, ২২ জন মন্ত্রী আসবেন আর ড্যাং ড্যাং করে ক্যাবিনেট মিটিং করে বেরিয়ে যাবেন, আর মোর্চা কিছুই বলবে না, সেটা যে একটা কল্পনা ছিল (অথবা ইন্টেলিজেন্স –এর ব্যর্থতা) সেটা তাঁরা এখন হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে। মোর্চা জঙ্গি আন্দোলন করল, বনধ-ও ডাকল। ভরা ছুটির মরশুমে পর্যটকরা তাড়াহুড়ো করে নেমে গেলেন। কিন্তু এত কিছু যে ঘটল, সেটা কেন?

তৃণমূলের পশ্চিমবঙ্গ জয় করতে আর কিছুই বাকি নেই, দার্জিলিং ছাড়া। বামেদের কোনও দুর্গই আর আস্ত নেই। কংগ্রেসের দুর্গ মালদা, মুর্শিদাবাদ, দিনাজপুরে যথেষ্ট ফাটল ধরা পড়েছে। জঙ্গলমহলও কব্জায়। কেবলমাত্র দার্জিলিঙের পালকটাই মুকুটে নেই। সেটাই তৃণমূলের কাছে হয়ে উঠল সম্মানের লড়াই (কারণ ৩টি বিধানসভা আর ১ টি লোকসভার আসন নিয়ে তাঁদের রাজনৈতিকভাবে খুব-একটা অসুবিধে থাকার কথা নয়)। এদিকে গুরুঙ্গও তালে তাল মেলাচ্ছে না। তিনি বিজেপি-কে সমর্থন করে বসে আছেন। জিটিএ-র টাকা নিয়েও কি করছেন বোঝা যাচ্ছে না, উন্নয়ন যে বেশি হচ্ছে না সে তো দেখাই যাচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নতি না হওয়ায় গুরুঙ্গের সমর্থনে একটু চিড়ও যেন দেখা যাচ্ছে! সংকট আরও একটু পাকলো নতুন নতুন জনগোষ্ঠী ভিত্তিক বোর্ড গঠনে। এই বোর্ডগুলো জিটিএ-র মধ্যে থেকে হলে ভাল হত, কিন্তু তাতে তো ভাগীদার সেই মোর্চা, তাই হল বাইরে থেকে। উন্নয়নের সম্ভাবনার পুরোটাই চলে গেল মুখ্যমন্ত্রীর ঝোলায়। সঙ্গে সঙ্গে চলল পার্টিকে পাহাড়ে মজবুত করার কাজ। তৃণমূলকে হয়ে উঠতে হবে একটা মোর্চা বিরোধী প্ল্যাটফর্ম। সেই পালে হওয়াও লাগল।

গুরুঙ্গ পড়ে গেলেন মুশকিলে। তৃণমূলের কাছে তো রাজনীতি করার জন্য বাকি জেলাগুলো আছে, কয়েকটি অন্য রাজ্যও আছে। দার্জিলিঙে প্রাসঙ্গিকতা হারালে মোর্চা কি মেদিনীপুরে গিয়ে রাজনীতি করবে! তাই জমি এতটুকুও ছাড়া চলবে না। তার জন্য যা করতে হয়, হবে। জঙ্গি আন্দোলন তো তাই সই। তৃণমূলের কাছেও সম্মানটা তো শুধু দার্জিলিঙে দলের পতাকা ওড়ানো নয়, পাহাড়ের উন্নয়ন করে তৃণমূলকে প্রতিষ্ঠা করা পাহাড়ে। দার্জিলিং হয়ে উঠেছে মুখ্যমন্ত্রী এবং গুরুঙ্গের কাছে সম্মানের ব্যাপার। তাই এই ঝামেলা খুব শিগগির মিটবে কী!

কি হলে ভাল হত? ভাল হত যদি মোর্চা পাহাড়ের উন্নয়নে মন দিত। ভাল হত যদি তৃণমূল শেষ পালকটার জেদ না ধরতেন। ভাল হত যদি বিজেপি একটা আসনের লোভে পাহাড়ে নাক না গলাত। ভাল হত যদি গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন নিয়ে বাঙালি বেশি  আবেগপ্রবণ না হত।

Spread the love

Check Also

চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক

ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *