দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় :
নকল হইতে সাবধান!
আসল হরলিক্স বিস্কুট ফিরে এসেছে।
রাজ্য বিজেপির অন্দরে এটাই এখন না বলা বাণী। সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য প্রত্যাশিত কারনেই বলছেন যে তাঁর বক্তব্য আর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথার মধ্যে কোনও গুণগত ফারাক নেই। তিনিও ভালো করেই জানেন যে তাঁর ওই শাকে মাছ ঢাকা পড়ছে না। যে দিলীপ ঘোষ দু’দিন আগে শমীকের পদপ্রাপ্তির দিনে আমন্ত্রিত ছিলেন না, সেই দিলীপ আজ ঢাকঢোল বাজিয়ে জানান দিলেন ‘উটকোদের উপদ্রবে’ সাবেক বিজেপি অতিষ্ঠ হলেও হারিয়ে যায়নি।

ঠিক যেমন কয়েক বছর আগে এই প্রতিবেদককে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে শমীক ভট্টাচার্য বলেছিলেন, দলের লাগাম পুরনোদের হাতেই থাকবে। একুশে পরাজয়ের দায়িত্ব কার? টেকনিক্যালি তখন সভাপতি ছিলেন দিলীপ। ঠিক যেমন উনিশের জয়ের কৃতিত্ব তাঁর (মুকুল রায়ের অবদান সত্বেও) ঠিক তেমনই একুশের হারের দায়িত্ব তাঁর হবারই কথা। যদিও একুশের নির্বাচনের প্রচার থেকেই শুভেন্দু দলের স্ট্রাইকার! সে যাই হোক। এতদিন পর মঙ্গলবার বিজেপির সল্টলেকের আপিসে এসে দিলীপ সাংবাদিকদের বললেন, একুশ ও তার পর থেকে ভোট কেন নিম্নমুখী সেই বিশ্লেষনের ভার তিনি শমীক ভট্টাচার্যকেই দিয়েছেন। দিলীপের কথায়, শমীক দা দলে আমার চেয়ে সিনিয়র।
শমীকদাই ভালো বিশ্লেষন করতে পারবেন।

দলের মধ্যে সুকান্ত-শুভেন্দু জমানায় বিজেপি পন্থী সংবাদমাধ্যমের টিআরপি বেড়েছে! পছন্দের পোর্টালের ভিউ বেড়েছে! যেটি কমেছে, সেটি হল বিজেপির ভোট। কেন কমল? হিন্দু-মুসলিম রাজনীতির ঠেলায় আর সনাতানের জ্বালাতনে সেই কাটা-ছেঁড়া করার সময় কোথায়? পতনশীল ভোটের ওপর দাঁড়িয়ে ছাব্বিশের খোয়াব, হিন্দু ভোটের একত্রীকরনের ডাক আর কথায় কথায় মুসলিমদের অপমান! পাকানো চোখ আর ওঠানো তর্জনী। দু’দিন আগে পর্যন্ত এটাই ছিল রাজ্য বিজেপির চেনা ছবি।

এবার এক ঝটকায় বদলাতে শুরু করেছে ছবি। ভাষনে শিক্ষার ছাপ পশ্চিমবঙ্গে এখন ডুমুরের ফুল। নতুন পুরনো মিলিয়ে মাত্র কয়েকজনকে বাদ দিলে বক্তৃতার ভাষা এখন কলতলার ঝগড়া। সেইখানে শমীক যেন উৎসারিত আলো! শমীক নিমেষে বুঝিয়ে দিয়েছেন হিন্দু বা সনাতন যে নামেই ডাকো তা হল বহুত্ববাদ। মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা উক্তি নাকচ করেছেন তিনি এবং স্পষ্ট করে বলেছেন, এটা বিজেপির মতাদর্শ নয়। প্রশ্ন উঠতে পারে, বিজেপির মধ্যে এইসব এলিমেন্ট তাহলে কেন? সে আলোচনা অন্যত্র হবে। এখন বুঝতে হবে, রাজ্য বিজেপির লাগামটা ‘আসল’ বিজেপির হাতে কিনা! আদর্শগত ভাবে যারা বিজেপি, তাদের হাতে কিনা? এটাও দেখতে হবে, অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যারা বিজেপি তাদের দল কী ভাবে কতটা কাজে লাগায়?

শেষে, শমীক ভট্টাচার্যের জন্য রইল তাঁর প্রিয় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের একটি কবিতার কয়েকটি পংক্তি:
আশা ছিল সন্তানের উৎপন্ন চুলে হাত রাখা যাবে, এরকম তরো ছিল আশা। সংসারে ও চৌরাস্তায় ন্যাংটার মুখশ্রীখানি দেখে নিজ হাত রেখেছি মাথায়।…

আপনারা সামনের যাঁরা তাঁরা বসে পড়ুন, নচেৎ প্রম্পটার তুমি ভবিষ্যত থেকে প্রম্পট করো। এ নাটক মাইরি পড়া নেই। কী ভয় করছে রে শালা! বাকি সব কাস্টিং কোথায়?

Channel Hindustan Channel Hindustan is Bengal’s popular online news portal which offers the latest news