নিজস্ব প্রতিনিধি :
হিমালয়ের এক প্রত্যন্ত গ্রাম মণ্ডল। নদীর ধারে সুন্দর পাহাড়ি এক বাড়ি। সেই বাড়ির মালিক চন্দ্র সিং রানা। গাঢ়োয়ালের মানুষ কিন্তু বাংলা জানেন। আমার সঙ্গে পরিষ্কার বাংলায় আমন্ত্রণ জানালেন। চা খেয়ে যাওয়ার জন্য বললেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এত ভাল বাংলা জানলেন কী করে! উনি বললেন, “আমি কলকাতায় বহুদিন পুলিশে কাজ করার সুবাদে বিধান রায়ের সিকিয়োরিটি হিসেবে অনেক বছর ছিলাম। উনিই তো আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। ডাক্তারববাবুর জন্যেই আমি আজ সশরীরে দাঁড়িয়ে। একদিন ওঁর সঙ্গে যাচ্ছি গাড়িতে। উনি আমাকে বললেন, “চন্দ্র তুমি অনেকদিন বাড়ি যাওনি। বাড়ি যাও। মাস কয়েকের ছুটি নাও। তোমার শরীর ঠিক নেই।”
আমি বললাম, “না স্যর, আমার তো কোনও অসুবিধে নেই।”
ডাক্তারবাবু বললেন, “না চন্দ্র তুমি ঠিক নেই। কালই বাড়ি রওনা হয়ে যাও। তোমাকে তিন মাসের ছুটি দিলাম।”
আমি তো ট্রেন ধরে রওনা দিলাম। তখন ঋষিকেশ থেকে হেঁটে যেতে হত। তাই করলাম। মাঝ পথে শরীর বিগড়োতে লাগল। সঙ্গীসাথি ছিল তাই কোনওরকমে বাড়ি পৌঁছলাম। ডাক্তারবাবুর কথা মিলে গেল। ভীষণ শরীর খারাপ হয়েছিল সেবার। মাস ছয়েক পর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলাম। ফিরে এলাম কলকাতা। আবার একই কাজে যোগ দিলাম। ডাক্তারবাবু বললেন, “শরীর এখন ঠিক লাগছে তো। তুমি ভিতরে ভিতরে অসুস্থ পড়েছিলে। তোমার গ্রামের দুধ-ঘি অনেকদিন পেটে পড়েনি। ওটাই তোমার প্রয়োজন ছিল। তুমি খুব জোর বেঁচে গেলে চন্দ্র।”
আমি আর একবার দেখেছিলাম ডাক্তারবাবুর বাড়িতে। উনি রোজই রোগী দেখতেন। সেদিন ওঁর বাড়িতে ত্রিপুরা না অসম থেকে এসেছিলেন এক ভদ্রলোক তাঁর ছেলেকে নিয়ে। ডাক্তারবাবু যাওয়ার সময় ওই ভদ্রলোককে ডাকলেন চেম্বারে। ভদ্রলোক বললেন, “আমি নয়, ছেলেকে দেখাতে নিয়ে এসেছি।”
ডাক্তারবাবু বললেন, “আপনার ছেলের কিছু হয়নি। আপনি সাংঘাতিক অসুস্থ।”
ভদ্রলোক নিমরাজি হয়ে গেলেন ভিতরে। তারপর দেখিয়ে বাবা-ছেলে বেরিয়ে গেলেন। মাস তিন-চার বাদে সেই ভদ্রলোককে দেখি বসে আছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ভাল আছেন?
উনি বললেন, “খুব জোর বেঁচে গেছি এ যাত্রায়। উনি যদি জোর না-করতেন তাহলে তো মারা যেতাম। উনি সাক্ষাৎ ভগবান।”
এ ঘটনাটা শুনেছিলাম এক বর্ষীয়ান সাংবাদিকের কাছে। বিধান রায় রাইটার্স বিল্ডিং যাচ্ছিলেন। গাড়ি দিয়ে দেখতে পেলেন এক ট্র্যাফিক কনস্টেবলকে। অফিস ঢুকে ফোন করে ডেকে পাঠালেন ওই কনস্টেবলকে। বললেন, “তোমাকে আর ডিউটি করতে হবে না। বাড়ি ফিরে লোকজন সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে ভরতি হয়ে যাও। ধুলো খেয়ে তোমার লাঙে জমে আছে। পরিষ্কার করতে হবে।”
বেঁচে গিয়েছিলেন সেই কনস্টেবল। বিধান রায় ছিলেন একেবারে ধন্বন্তরি। পশ্চিমবঙ্গের ব্যস্ত মুখ্যমন্ত্রী হলেও কোনওদিন ডাক্তারি করা থেকে বিরত ছিলেন। সাধারণ মানুষের সেবা করে গেছেন কাজের ফাঁকে।
বিধান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট পালন করল বিধান রায়ের জন্ম ও মৃত্যু দিবস। দেখুন সঙ্গের ভিডিয়োতে।
লাইক, শেয়ার ও মন্তব্য করুন
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন