চ্যানেল হিন্দুস্তান ব্যুরো:
আচমকাই তৃণমূলে (TMC) যারা মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ হয়েও রয়ে গিয়েছেন, তাদের ছানবিন করা শুরু করেছে প্রশান্ত কিশোরের দলবল। সম্প্রতি এই কাজে হাত দিয়েছে পিকের আইপ্যাক। মূলত ব্লক স্তরের তৃণমূল কর্মীদের ফোন করছেন আইপ্যাকের সদস্যরা, জানতে চাইছেন এখনও এলাকায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে কারা মুকুল ঘনিষ্ঠ রয়ে গিয়েছেন ? বর্তমানে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান কি ? দলে তাঁরা কতটা সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় ? সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রের ফলাফল বদলাতে সেই সক্রিয়তা বা নিষ্ক্রিয়তা কতটা প্রভাব ফেলতে পারে ? গত পৌনে তিন বছর আগে মুকুল রায় (Mukul Roy) তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। দিনটা ২০১৭ সালের ৩ নভেম্বর। কিন্তু তার এতদিন পর কেন মুকুল রায়ের অনুগামীদের খোঁজ করছে টিম পিকে ? তা নিয়ে প্রশ্ন ব্লক স্তরে ফোন পাওয়া তৃণমূলের কর্মী মহলে।
১৯৯৮-২০১৭ সাল পর্যন্ত যতদিন মুকুল রায় তৃণমূল ছিলেন, ততদিন জেলা থেকে ব্লক স্তরের তৃণমূল কর্মীদের নামধাম জানা ছিল তাঁর। একটা সময় তাঁকে বলা হত তৃণমূলের ‘সেকেন্ড-ইন-কমান্ড’। ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের দায়িত্ব নেওয়ার পর দলের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি চলে গিয়েছিল মুকুলের হাতে। ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসের পর থেকে তৃণমূল রাজনীতির সমীকরণ বদল হতে শুরু করে। সংগঠনের প্রভাব বাড়তে থাকে মুখ্যমন্ত্রীর সদ্য নির্বাচিত সাংসদ ভাইপোর। দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হতে শুরু করে মুকুলের। দূরত্ব কাটিয়ে তৃণমূলে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করলেও, ভাঙা কাঁচ আর জোড়ে না। শেষে নিজেই রাজ্যসভার সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিজেপিতে যোগদান করেন।
তৃণমূলে থাকাকালীন মুকুলই ছিলেন দলের ভোট কৌশলী। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি শিবিরে এসেও নিজের ভোট কুশলতার পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। তাই রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপিতে বর্তমানে যতই নিষ্ক্রিয় থাকুন মুকুল, বিধানসভা ভোটে আবারও তাঁকে সক্রিয় করবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আর সেখানেই আশঙ্কার মেঘ দেখছে তৃণমূলের বর্তমান নেতৃত্ব। নিজের পুরনো যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে যাতে কোনওভাবেই আগামী বিধানসভা নির্বাচনে মুকুল তৃণমূলের কোনও ক্ষতি করতে না পারেন, সেই লক্ষ্যেই দলের ‘বিভীষণ’দের খুঁজে বার করতে চাইছেন প্রশান্ত কিশোর (Prashanta Kishor)।
তবে শুধু মুকুল রায় নয়, গত মার্চ মাসে দলে শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামীদের বাছাই করার কাজও শুরু করেছিল প্রশান্ত কিশোরের আইপ্যাক। ১ মার্চ শহীদ মিনারে জনসভা থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের (Amit Shah) একটি মন্তব্যের পর শুভেন্দুর বিষয়ে ‘রাজনৈতিক খানা তল্লাশি’ শুরু করে আইপ্যাক (IPAC)। মুকুল রায়ের মতোই তাঁর ক্ষেত্রেও জানতে চাওয়া হয়েছিল এলাকায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে কারা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) ঘনিষ্ঠ রয়েছেন? বর্তমানে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান কি? দলে কতটা সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয়? সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রের ফলাফল বদলাতে সেই সক্রিয়তা বা নিষ্ক্রিয়তা কতটা প্রভাব ফেলতে পারে? রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রীর অনুগামীদের খোঁজখবর নেওয়ার পর এবার দলত্যাগী মুকুলের অনুগামীদের খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছে টিম পিকে।
তবে দলের ব্লকস্তরে বা বুথস্তরে, নিচুতলার কর্মীদের কাছে খোঁজ নেওয়ার ফলে হিতে বিপরীত হচ্ছে বলেই অনেকে মনে করছেন। তাঁদের মতে, প্রথমত ব্লক স্তরে এই ধরনের প্রশ্ন নিয়ে ফোন করার ফলে দলের নিচুতলার কর্মীরা বুঝতে পারছেন মুকুল কে নিয়ে এখনও কতটা মাথাব্যথা দলের শীর্ষ নেতৃত্বের। তাঁরা বলছেন, পিসি-ভাইপো দলে মুকুলের ছায়া কে ভয় পাচ্ছেন, তাই গোয়েন্দা লাগিয়েছেন। প্রশান্ত কিশোরের এ হেন কাণ্ডে নিচুতলার কর্মীদের কাছে দলীয় নেতৃত্বের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলেই দলের একাংশের অভিমত।