Breaking News
Home / TRENDING / মমতার পতাকা যাঁর হাতে যাবে তাঁর কি বিশুদ্ধ অনুগামী হলে চলে?

মমতার পতাকা যাঁর হাতে যাবে তাঁর কি বিশুদ্ধ অনুগামী হলে চলে?

দেবক বন্দ্যোপাধ্যায়

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিষেক বচ্চনের কোনরকম তুলনা চলে?
চলে বৈকি!
একজন, নিজেই প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠা, রুপোলি পর্দার
এক মহীরুহের পুত্র। আর একজন জীবদ্দশাতেই বাংলা তথা ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে নিজের জন্য একটি বৃহৎ অধ্যায় নির্মাণ করে ফেলা নেত্রীর ভ্রাতুষ্পুত্র।

একজন বিভিন্ন সিনেমায় নিজের অভিনয় দক্ষতা প্রমাণ করেও, কিংবদন্তি পিতার ব্যাপক ছায়ার অন্ধকার কাটিয়ে উঠতে না পেরে এখনো অমিতাভ-পুত্র। অন্তত জনমানসে এখনো পর্যন্ত এটাই তাঁর প্রথম পরিচয়। আর একজন একুশের নির্বাচন পর্যন্ত প্রথম পরিচয়ে ‘পিসির ভাইপো’ হয়ে থাকলেও, ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচন যখন এই মুহূর্তের বড় লক্ষ্য, তখন তিনি নিজের পরিচয়ে উঠে দাঁড়াতে চাইছেন। স্বনামের স্বাক্ষর রাখতে চাইছেন রাজনীতিতে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর মাতৃসমা পিসি, এটা তাঁর জীবনে বড় প্রাপ্তি। কিন্তু এই প্রাপ্তি যেন তাঁর প্রকৃত পক্ষে বড় রাজনীতিক (শুধুমাত্র পদ নয়) হয়ে ওঠার পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, সেদিকেও নজর রাখতে চাইছেন।

রবিবার, জি ২৪ ঘন্টায় অভিষেকের সাক্ষাৎকার দেখে এই অধম কলমচির এমনটাই মনে হচ্ছে।

তেমন কোনো কথা না বলে, আক্রমণের ভাষায় আক্রমণ না করে, অভিষেক, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে যা বলেছেন, তার অর্থ দাঁড়ায়, কল্যাণের তথাকথিত প্রতিবাদ দলের স্বার্থে নয়। নিজের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক সমীকরণের স্বার্থে। তাঁর প্রশ্ন, কল্যাণ, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে ফেরা নিয়ে সরব হন। কিন্তু বাকি আরো যাঁরা ফিরে এলেন, তাঁদের নিয়ে তো মুখ খোলেন না! সাক্ষাৎকারে, কল্যাণের ‘তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়’ উদ্ধৃত করার বিষয়টিও হাস্যকর করে দিয়েছেন অভিষেক। হাসিমুখে বলেছেন, উনি (অভিষেক নিজে) তুচ্ছ, ওঁর কাছে মেরুদণ্ড প্রদর্শনের কিছু নেই।

একই ভাবে, তেমন কোনো কথা না বলে বা তেমন ভাবে কোনো কথা না বলে, দলের দুই সিনিয়র নেতা পার্থ-বক্সীকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছেন তিনি। হাতে কাগজ নিয়ে দেখিয়েছেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সীর সই করা প্রার্থী তালিকায় গলদ। দেখিয়েছেন, তাঁরা এমন প্রার্থী কে মনোনয়ন দিয়েছেন যিনি আর বেঁচে নেই! আবার মহিলা সংরক্ষিত ওয়ার্ডে পুরুষ প্রার্থী দেওয়ার উদাহরণ ও দেখিয়েছেন প্রমাণ সমেত। তবে মৃদু আঘাত করে মলমের মোটা প্রলেপ দিতেও ভোলেননি। বলেছেন, এতবড় প্রার্থী তালিকায় ছোটখাটো ভূল হতে পারে।

যে সকল মহল মমতা-অভিষেক বা কালীঘাট-ক‍্যামাক স্ট্রিট সংঘাত বা দুরত্ব প্রতিপন্ন করতে চাইছেন, তাঁরা একটু সদর্থক ভাবনা ভেবেও দেখতে পারেন। তাঁরা ভাবতে পারেন, একুশ পর্যন্ত অভিষেক সম্পর্কে যে ‘লিফটে ওঠা’ প্রচার চলেছিল, একুশের জয়ের পর সেই প্রচারের প্রভাব যদি কিছু বেঁচে থাকে, তাহলে স্বাভাবিক কারনেই তা থেকে বেরিয়ে আসা অভিষেকের প্রয়োজন। তাঁর সঙ্গে মমতার মতের অমিল হচ্ছে? যদি তাঁকে দলের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি ধরে নেওয়া হয়, তাহলে এটাই স্বাভাবিক।

যিনি নেতা হবেন, তাঁর একটা নিজস্ব মতামত থাকবে, দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে, এটাই প্রত্যাশিত নয় কি? দলের ইনার কনফ্লিক্ট-এ লড়ে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবেন, এটাই তো কাঙ্ক্ষিত হওয়ার কথা।

আর মমতার পতাকা যাঁর হাতে যাবে তাঁর কি শুধুমাত্র বিশুদ্ধ অনুগামী হলে চলে?
পতাকা টি ‘বহিবার শকতি’ তাঁর তো থাকার কথা!

নয় কি?

Spread the love

Check Also

চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক

ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *