Breaking News
Home / Uncategorized / গ্রামাফোন কোম্পানির বাড়ি

গ্রামাফোন কোম্পানির বাড়ি

শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় :

গ্রামাফোন কোম্পানির ঐতিহাসিক ‘studio@D2’- তে তালা ঝুলেই গিয়েছে। এবারে এই চৌহাদ্দি ভেঙে দেশলাইবাক্স মার্কা বাড়ি ওঠার অপেক্ষা। যে – মালিক গানবাজনার ‘গ’ বোঝেনা কেবল ব্যবসা বোঝেন-তাঁর  কাছ থেকে আর কী আশা করা যায়। আমাদের রাজ্যে একাধিক সরকারী মিউজিক অ্যাকাডেমি আছে।তবে সেগুলোর না আছে চোখ, না আছে গান শোনার কান-ফলে এইচ এমভি’র দমদম সটুডিও  কমপ্লেক্স উঠে গেলে কেই বা গলা চড়াবে? ১৯২৮-এএই কমপ্লেক্সে- এ সুর বাঁধা শুরু। তার আগে পর্যন্ত গ্রামাফোন কোম্পানি বেলেঘাটায়। অধুনালুপ্ত ‘আলোছায়া’ সিনেমাহলের পিছনে। ১৯২৫-এ কখন তাঁর গান নিয়ে রবীন্দ্রনাথ প্রথম চুক্তি করেছেন এইচ এমভি’র সঙ্গে, তখনও তাঁদের ঠিকানা ‘139 Beliaghata Road at the suburbs of Calcutta’ আর রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরে ১৯৪৫- এ রবিঠাকুর, তথাকথিত বিশ্বভারতী মিউজিক বোর্ড আর এইচ এমভি’র চুক্তিতে কম্পানির ঠিকানা ৩৩,যশোর রোড।

এই স্টুডিও @ দমদম –এ যাঁরা যাওয়ার সুযোগ পেলেন না, তাঁরা বুঝতেই পারলেননা কী খোয়াতে বসলাম আমরা চিরতার। বিঘার পর বিঘা ছুয়ে   বিশাল কমপ্লেক্স। ঢুকেই ডানহাতি বিশাল লাল ইটের মিনার ‘HMV’ লেখা- এটা এককালে নাকি বাগুইআটি থেকে দেখা যেত। মিনার থেকে লম্বকোণে চলে গেছে ৩০ ফিটের রাস্তা, বাঁদিকে টানা একতলা কাছারিবাড়ি। সাহেবি কেতায় বানানো। বড় বড় গোল স্কাইলাইট, পোর্ট উইন্ডো। তাঁর পেটের মধ্যে অনেক দফতর ,খাজাঞ্চিখানা, কেষ্টবিষ্টুদের  চেম্বার এবং একটি অসামান্য বোর্ড রুম-যার চারপাশের দেয়ালে গ্রামাফোন কিংবদন্তি ছবি। রমাপ্রসাদ গোয়েনকার আমলেই সম্ভবত তাঁরই শখে সারা দমদমের আপিস-দেয়ালে ছিল সুরের গান্ধর্ব গান্ধর্বীদের ছবি।এমন কর্তাও দেখেছি। যাঁরা রফি কিশোর আশা লতা হেমন্ত মান্না সন্ধ্যার বাইরে কাউকেই চিনতেননা।এই আফিস ব্লকেরই শেষের দিকের একটি ঢাকা দালানে ছিল এইচ এমভি’র ডমফাই –আর্কাইভ ! খানকতক ভাঙা রেকর্ডিং মেশিন ।তাতে অসম্ভব সংক্ষিপ্ত বাতুল একটু ইতিহাস সাঁটা ; আর দেয়ালে কয়েকটা মাদার নিকেল রেকর্ড – এই নিয়ে সাড়ে সাত গন্ডার আর্কাইভ। তাঁর ঠিক উল্টো দিকে  সেই তীর্থস্থান-studio। এই বিশাল রেকর্ডিং ফ্লোরটা সকলেই  ছবিতে দেখেছেন সত্যজিৎ রায়ের কল্যানে- এই সেদিনও ‘ মনের মানুষ’- এর লালনের গান রেকর্ড করেছেন গৌতম ঘোষ আর প্রসেনজিৎ। ক’বছর  আগেও আমি এখানে রেকর্ডিং- এর ফা৬কে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছি শর্মিলা ঠাকুর কি রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা কি রাশিদ খনের সঙ্গে। এখানেই ছিল সত্যি আর্কাইভটি- গানের তোশাখানা, সোয়া এক্লাখ গানের গুদাম। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, তিনি রের্কডিং এ এলে studio ফুল দিয়ে সাজানো হত। গোলাপজল থাকত।থাকত বিশাল বারকোশে সকলের জন্যে সন্দেশ- শিল্পীর তরফ থেকে। আমার অর্ধশতাব্দীর জীবনেই আমি এখানে হেমন্ত – মান্না- মানবেন্দ্র- আরতি- অনুপ-ঊষা- শ্রাবন্তীদের যেমন দেখেছি, তেমনই দেখেছি বিলায়েত খান সাহেব কি বালমুরলীকৃষ্ণকে। মণিলাল নাগকে দেখেছি আবার হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়াকেও। শুধু ত গান নয় , এই studio তেই রের্কড হয়েছে সব্যসাচীর ‘মন্দ্রকন্ঠ’ বিদ্রোহী ,শম্ভু মিত্রের ‘মধুবংশীর গলি’ বা সৌ্মিত্রদের ‘শেষের কবিতা’। নব্বই টা বছর সেই রবীন্দ্রনাথের আমল –গহরজান অস্তমিত কিন্তু তয়ফাওয়ালির গান তখনও রেকর্ডের সম্পদ – সেই তখন থেকে এই গানের সুরের আসনখানি পাতা ছিল দমদমে।

সে সরস্বতীর বিদায় হয়ে গেল। কুলোর বাতাস দিয়ে। সেখানে ক’দিন পরে আসবে বিশ্বকর্মার সুপুত্তু্রেরা। আর কি হবে সেই সেই রাজহাঁসগুলির? যারা একেবারে পিছনের বিশাল দিঘিতে চরে বেড়াতো এমনই বৈশাখী দুপুরে?

সরস্বতীর বাহনের কথা আর কে ভাবে? এখন একজনই দেবতা- নগদ নারায়ণ।

( মতামত লেখকের )

 

 

 

Spread the love

Check Also

কেমন হলো ‘দ্য সবরমতি রিপোর্ট’-এর প্রথম ঝলক?

সুচরিতা সেন, বিনোদন ডেস্ক ২০২৩ সালে ’12 ফেল’ সিনেমার মাধ্যমে সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন …

কেমন হলো, মুখ্যমন্ত্রীর এপিসোডের প্রথম ঝলক ?

সুচরিতা সেন, বিনোদন ডেস্ক রোজ বিকেলে বাংলার প্রতিটি ঘরে বিনোদন শুরু হয় এই শো এর …

রশিদ খানের ফিরে দেখা জীবনধ্যায়

বিনোদন ডেস্ক, সুচরিতা সেন, আবার নক্ষত্রপতন, না ফেরার দেশে চলে গেলেন ওস্তাদ রশিদ খান। গানের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *